নাগালের বাইরে সবজি, দাম বেড়েছে মুরগি-মাছেরও
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির প্রভাবে বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। মাছ ও মুরগির দামও কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) পুরান ঢাকা রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর ও নারিন্দা কাঁচা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে ৬০ টাকার নিচে কোনও সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়সের দাম ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে, যেটা গত সপ্তাহেও ৪০ থেকে ৫০ টাকা ছিল। ২০ টাকা বেড়ে বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। ৭০ টাকার কাঁকরোল ৮০ টাকা, ৫০ টাকার পটোল ৬০ টাকা, ৮০ টাকার করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ৬০ টাকার ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো মানভেদে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চালকুমড়ো কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মিষ্টি কুমড়োর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁপের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আলুর দাম ২৫ টাকা। বরবটির কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
রায় সাহেব বাজারে সবজি বিক্রেতা সবুজ বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজি ও কাঁচা মরিচের ক্ষেত ডুবে গেছে। এ জন্য সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মহসিন আলম। বাজারের সবজির দাম নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। দেখেন, বাজারে সবজির অভাব আছে? কিন্তু বৃষ্টির অজুহাত দিবে। আর দাম বাড়াবে। এদের লাগাম টানারও কেউ নেই। কোনটা নেবো? কোনটার দামই ৬০ টাকার নিচে নেই।
মরিচের দাম ৩০০ টাকা!
গত সপ্তাহের প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সে মরিচের বর্তমান দাম ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা।
বৃষ্টির কারণে চালান কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সূত্রাপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, শ্যাম বাজারে কাঁচা মরিচের পাল্লা ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। গত সপ্তাহে যেখানে পাল্লা ছিল ৩শ টাকা, আজ সেখানে কেজি প্রতি ৩শ করে বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত বৃষ্টির কারণে চালান কম, সেজন্য দাম বেশি।
হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানিয়ে এ ব্যবসার সঙ্গে ৪০ বছর ধরে জড়িত শ্যামবাজারে আড়ৎদার ইদ্রিস আলী বলেন, বছরে গ্রীষ্মের শেষে ও বর্ষার পুরো সিজন মিলিয়ে ছয় মাস কাঁচা মরিচের দাম বেশি থাকে। এসময় দাম উঠানামা বেশি করে। বাজারে মাল বেশি থাকলে দাম হঠাৎ কমে যায়। আবার মাল কমে গেলে দাম বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, কাঁচা মরিচ এমন পণ্য যেটা ফ্রিজিং করা যায় না। এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ওপর বিক্রি করতে হয়।
মাছ-মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা
টানা বৃষ্টির প্রভাব মুরগি ও মাছের বাজারেও পড়েছে। সরবরাহও কিছুটা কম থাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি মানভেদে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০০ টাকার পাঙ্গাশের দাম ২২০ টাকা, ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকার রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, ২৬০ টাকার রুই মাছের দাম ২৮০ টাকা। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। শিং মাছের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কই মাছ ২৫০ টাকা।
রায়সাহেব বাজারে মুরগি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে খামারি পর্যায় থেকে ঠিকমতো বাজারে মুরগি আনা যাচ্ছে না। অল্প কিছু মুরগি আনা হলেও বাড়তি গাড়িভাড়া দিতে হচ্ছে। এ জন্য দাম কিছুটা বেড়েছে।
নারিন্দা বাজারের মাছ বিক্রেতা সুমন বলেন, বৃষ্টির কারণে মাছের সাপ্লাই কম ছিল। আর সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় প্রতি শুক্রবারে মাছের দাম কিছুটা বেশি থাকে।
বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫৫ টাকা। আদা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, ছোট রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বড় রসুন ২০০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১২০ টাকা।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন