শরীরের ওজন বাড়লেই বাড়ে ত্বকের ঝুঁকি
আমরা অনেকেই মনে করি ত্বকের সমস্যা মানেই বাইরের কোনো কারণ-ধুলাবালি, রোদে পুড়া কিংবা প্রসাধনীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিন্তু আমাদের অজান্তেই শরীরের ভেতরে চলতে থাকা নানা পরিবর্তনও ত্বকে প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। বাড়তি ওজন শুধু ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায় না, তা চুপিসারে নষ্ট করে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও। ভাঁজে ঘর্ষণ, ঘাম জমে সংক্রমণ, শুষ্কতা, এমনকি ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী রোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত মেদের কারণে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চাইলে বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি ভেতর থেকেও নিজেকে ঠিক রাখাটা জরুরি।
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, স্থূলকায় প্রাপ্তবয়স্কদের একটা বড় অংশ (প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ) কোনো না কোনো ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। চামড়ার সামান্য অস্বস্তি থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী রোগ-সব কিছুর পেছনে দায়ী হতে পারে বাড়তি মেদ। চলুন জেনে নিই, কীভাবে বাড়তি ওজন আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে এবং কোন অভ্যাসগুলো পাল্টালে ত্বক বাঁচবে এই ঝুঁকি থেকে।
ভাঁজে ঘর্ষণ, ঘামে সংক্রমণ
অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়, যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে ভাঁজ। এইসব ভাঁজের মধ্যে ঘর্ষণ বাড়ে, ঘাম আটকে যায় এবং সেখানে সহজেই ছত্রাক সংক্রমণ হয়। দেখা দেয় চুলকানি, লালচে ভাব কিংবা ফুসকুড়ি।
দাগ-দুর্বলতা ও ধীর আরোগ্য
স্থূলতা ত্বকের কোলাজেন প্রোটিনকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে ত্বক দ্রুত ছিঁড়ে যায়, দেখা দেয় স্ট্রেচ মার্কস। আর কোনো কাটা বা ঘা হলে তা শুকাতেও সময় লাগে বেশি।
পানিশূন্যতায় রুক্ষ ত্বক
মেদবহুলদের ত্বকে পানি কম ধরে। ফলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফেটে যায় এবং তার স্বাভাবিক মসৃণতা হারায়।
রক্তপ্রবাহে বাধা
স্থূলতা শরীরের স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালন ব্যাহত করে। যার প্রভাব পড়ে ত্বকে; লালচে ভাব, ফোলা ভাব কিংবা রক্ত না পৌঁছানোর কারণে নির্জীব চেহারা দেখা দেয়।
সোরিয়াসিসের সম্ভাবনা বাড়ে
এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী স্কিন ডিজঅর্ডার, যেখানে ত্বকে মোটা, খসখসে প্যাচ দেখা যায়। গবেষণায় প্রমাণিত স্থূলতা থাকলে সোরিয়াসিসের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
ব্রণের আক্রমণ
হরমোনের ভারসাম্য হারায় বেশি ওজনে, ফলে ত্বকে তৈলাক্তভাব বাড়ে। রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলেই দেখা দেয় বারবার ব্রণ।
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস তীব্রতর হয়
স্থূলতা শরীরে একটি ক্রনিক প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমার লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করে দেয়। অনেক সময় এটি চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
ত্বক ভালো রাখতে কী করবেন?
ডার্মাটোলজিস্টরা বলছেন, শুধু বাহ্যিক যত্ন নয়, ওজন নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে ত্বক ভালো রাখার চাবিকাঠি। কিছু সহজ অভ্যাস মানলেই অনেক সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
প্রদাহরোধী খাবার খান
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন শাকসবজি, মৌসুমি ফল, বাদাম, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ ও হোল গ্রেইন। ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার ও অতিরিক্ত চিনিকে বলুন ‘না’। এতে দেহের প্রদাহ কমে এবং ত্বকও থাকে স্বাভাবিক ও উজ্জ্বল।
ওজন কমান, ত্বক বাঁচান
কেবল ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমালেই ত্বকের স্বাস্থ্য চোখে পড়ার মতো ভালো হয়ে যায়। সোরিয়াসিস কিংবা ব্রণের মতো সমস্যাও কমে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
রোজ অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং রুক্ষভাব দূর করে। শুধু ত্বকই নয়, পুরো শরীরের জন্যও এটি অত্যন্ত জরুরি।
রোদ, ধুলাবালি, প্রসাধনী-এসবকে দায়ী করেই আমরা অনেক সময় ত্বকের সমস্যার কারণ খুঁজি। অথচ ভেতর থেকেই যদি সমস্যা শুরু হয়, তাহলে উপশমের পথও হওয়া উচিত ভিন্ন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পানি পানের অভ্যাস-এই তিনেই লুকিয়ে আছে আপনার ত্বকের প্রকৃত সুস্থতা। তাই নিজেকে ভালোবাসুন, ওজন কমান, আর ত্বককে দিন নতুন জীবন।