নিউ জিল্যান্ডে মাওরি জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব করার অভিযোগে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ
নিউ জিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব করার অভিযোগে একটি বিলের বিরুদ্ধে দেশটির পার্লামেন্টের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। নতুন বিলে বর্ণবিদ্বেষ উসকে দেওয়ার আশঙ্কায় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) অন্তত ৪২ হাজার মানুষ সমবেত হন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিটিশ ও মাওরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৮৪ বছর পুরোনো চুক্তির নতুন ব্যাখ্যার জন্য সম্প্রতি ‘ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল’ উত্থাপন করেছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। বর্তমান ডানপন্থি সরকারের জোটসঙ্গী লিবারটেরিয়ান অ্যাক্ট নিউ জিল্যান্ড পার্টি ওই চুক্তির একটি সংকীর্ণ ব্যাখ্যা প্রচার করছে। তাদের মতে, মাওরি জনগোষ্ঠী বাদে অন্যান্য নাগরিকদের প্রতি ওই চুক্তি বৈষম্যমূলক।
বিলটি পাশ হওয়ার জন্য এখনও প্রয়োজনীয় সমর্থন নেই। সমালোচকরা বলেছেন, নতুন প্রস্তাব পাস হলে মাওরি সম্প্রদায়ের কয়েক দশকের অগ্রগতি বিনষ্ট হতে পারে। নিউ জিল্যান্ডের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মাওরি জনগোষ্ঠী হলেও তারা জীবনমানের দিক থেকে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
ওয়েলিংটনের হোয়ানা হ্যাডফিল্ড জীবনে প্রথমবারের মতো কোনও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আমার নাতি-নাতনিদের জন্য এখানে এসেছি। মাওরি হিসেবে আমাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক, অস্ত্র ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। কারো পরনে ছিল ‘তোইতু তে তিরিতি’ (চুক্তি সম্মান করুন) লেখা টিশার্ট। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকের হাতেই ছিল মাওরি সম্প্রদায়ের পতাকা।
এই বিক্ষোভের প্রধান অংশ ছিল দেশের উত্তর প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া নয় দিনের দীর্ঘ পদযাত্রা। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন শহর ও গ্রামের মানুষ মিছিলে যোগ দিয়ে ওয়েলিংটনে পৌঁছান।
নগাতি তোয়া গোষ্ঠীর নেতা হেলমুট মোডলিক বলেছেন, যারা আমাদের বিভক্ত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এটা অসম্ভব। মনে রাখবেন, আমরা এক জাতি।
তার এই বক্তব্যে তালি দিয়ে সাড়া দেন বিক্ষোভকারীরা।
১৮৪০ সালে ব্রিটিশরাজ ও ৫০০ মাওরি নেতার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে নিউ জিল্যান্ডের শাসন কাঠামো গড়ে ওঠে। আজও এই চুক্তির বিভিন্ন ধারা দেশটির আইন ও নীতিমালার ভিত্তি।
এখন পর্যন্ত বিলটি প্রথম পাঠ অতিক্রম করেছে। তবে সরকারের অন্য জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পার্টি ও নিউ জিল্যান্ড ফার্স্ট এটিকে চূড়ান্তভাবে সমর্থন করবে না বলে জানিয়েছে।
বিক্ষোভের সময় হাজারো মানুষ নতুন বিলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ও ঐতিহ্যবাহী মাওরি যুদ্ধ নৃত্য ‘হাকা’ পরিবেশন করেন।