খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখনো দু’টি পথ আছে
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যাতম প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা যাই বলি না কেন, এখন তার সাময়িকভাবে কারামুক্তির জন্য দু’টি পথই খোলা আছে। এর একটি হলো প্যারোল আর অন্যটি হল ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় দণ্ড স্থগিত করে সরকার যেকোনো সময় তাকে মুক্তি দিতে পারেন।
প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে যে কথাই বলি না কেন, আইনের বিধান অনুযায়ী এই দু’টি পথ ছাড়া অন্যকোনো পথ তাকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে না। এর যেকোনো একটি পথে তার মুক্তি আসতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোল বা ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে কী কারণ থাকতে পারে?
খন্দকার মাহবুব হোসেন: বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। পিজি হাসপাতালের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) যতই সুনাম থাকুক না কেন সব চিকিৎসা সেখানে হয় না। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের রাষ্ট্রের অনেকেই সরকারি খরচে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় পিজি হাসপাতালে সব চিকিৎসা হয় না। সাধারণ নাগরিরা যদি সমর্থবান হন, তারাও বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এখানে বলা হয়েছে, তার পিজি হাসপাতাল থেকে আরও উন্নততর চিকিৎসা প্রয়োজন। পিজিতে তার ব্যাপারে চিকিৎসার যে ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে রিয়্যাকশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া সেক্ষেত্রে এই চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছেন না। এক্ষেত্রে বিদেশে উন্নত ও অধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এই চিকিৎসার জন্য যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া সাবেক তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং দেশের অত্যান্ত জনপ্রিয় নেত্রী তাই তার জীবন রক্ষার জন্য দু’টি পদ্ধতির মধ্যে একটি পদ্ধতিতে তিনি সাময়িকভাবে কারামুক্তি পেতে পারেন। এই দু’টি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তাকে মুক্তি দিয়ে তার উন্নত ও সুচিকিৎসার সুযোগ দেয়া সরকারের মানবিক দায়িত্ব রয়েছে।
আপনি খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি কখনও প্যারোলে মুক্তি, আবার কখনও ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় মুক্তি দেয়ার দাবি করেছেন। এখন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সরকারের কাছে আবেদন করার কথাও শোনা যাচ্ছে। এ সম্পার্কে তার একজন অন্যতম আইনজীবী হিসেবে কী বলবেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : একজন দণ্ডিত ব্যক্তির সরকারের তরফ থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি আছে। এর একটি পদ্ধতি হলো, আসামি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অর্থাৎ তাকে প্রকারান্তরে দোষ স্বীকার করে নিতে হয়। আরেকটি পদ্ধতি জরুরি ভিত্তিতে সাময়িকভাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া যায়। আমাদের জেল কোডে সাময়িক মুক্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়। অথবা পরিবারের কারো দুর্ঘটনা ঘটলে বা পরিবারের কেউ মারা গেলে সেখানে সহনুভূতির প্রকাশ করার জন্য তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়। আরেকটি হতে পারে আমাদের ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় সরকার ইচ্ছা করলে কোনো ব্যক্তিকে তার সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দিতে পারেন। আবার যখন তিনি সুস্থ হয়ে আসবেন তখন তার বিচার চলবে আইন অনুযায়ী। এই তিনটি পদ্ধতি ছাড়া সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে মুক্তি দিতে পারেন না।
আইনি পথে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য চেষ্টার পর এখন প্যারোলে বা ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় কেন তার মুক্তির দাবি করছেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : একটি দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না। তখন স্বাভাবিকভাবে সমস্ত প্রশাসন যন্ত্র সরকারের ইচ্ছাধীন হয়ে যায়। আর ইচ্ছাধীন না হলেও তারা সরকারের প্রতি ইতিবাচক বা সরকার যেটা চায় সে ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসে। আমাদের আইনি ব্যবস্থার পথে অনেকটা তাই হয়ে আছে। সেক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেন এটা আমরা আশা করতে পারি না। এই কারণেই আমরা মনেকরি, প্রথমে বেগম খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বাঁচিয়ে রাখার পর তখন তার রাজনীতি। বেঁচে যদি তিনি না থাকেন সেখানে তার রাজনীতি আসে না।
খালেদা জিয়ার অন্যাতম প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। দেশে বা বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ জন্য তিনি ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া দেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের অন্যাতম বৃহৎ দলের চেয়ারপারসন, সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, তিনি একজন বয়স্ক মহিলা এবং গুরুতর অসুস্থ। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তার সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য দেশে বা বিদেশে উন্নততর চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ করে দেয়োর দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া প্যারোলে মুক্তি দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।