এক নজরে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন
আজ ৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। এবারই প্রথম নাগরিকদের পাশাপাশি অভিবাসীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এই নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ব্রিটেন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণের সামনে তুলে ধরতে সংখ্যাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে এএফপি। সেখানে সংক্ষেপে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেমন—
মোট আসন ৬৫০টি
যুক্তরাজ্য মূলত ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড— এই চারটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেল বা সামষ্টিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট— হাউস অব লর্ডস (উচ্চকক্ষ) এবং হাউস অব কমন্স (নিম্নকক্ষ)। দেশটির অভিজাত সম্প্রদায়ের জন্য হাউস অব লর্ডস কক্ষটি বরাদ্দ। এই কক্ষের এমপিদের সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হয় না।
অন্যদিকে সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হাউস অব কমন্সের সদস্যদের এমপি হতে হয় সরাসরি ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে। এই কক্ষের মোট আসনসংখ্যা ৬৫০টি।
মোট প্রার্থী ৪ হাজারের ওপর
হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মোট ৯৮টি রাজনৈতিক দল। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫১৫ জন এবং এটি একটি রেকর্ড। অতীতের কোনো নির্বাচনে এতগুলো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেননি।
এবার প্রার্থীর সংখ্যাও বিগত যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি। বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার হিসেব বলছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিটি আসনের জন্য এবার লড়াই করছেন গড়ে ৫ জন থেকে ১৩ জন প্রার্থী। এই প্রার্থীদের মধ্যে ৩০ শতাংশই নারী।
প্রার্থীদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের জয়ের সম্ভাবনা শুণ্যের কাছাকাছি তো বটেই, উপরন্তু তাদের প্রার্থিতা ভোটারদের মধ্যে হাস্যরসের উদ্রেক করছে। যুক্তরাজ্যে এ ধরনের প্রার্থীকে বলা হয় ‘কৌতুককর প্রার্থী’ (জোক ক্যান্ডিডেট)। ব্রিটেনভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেক্টোরাল রিফর্স সোসাইটির বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে জোক ক্যান্ডিডেটের সংখ্যা মোট ২৯ জন।
অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে যে নামটি সবচেয়ে কমন, সেটি হলো— ডেভিড। ১০০ জনেরও বেশি সংখ্যক প্রার্থীর নামের সঙ্গে ‘ডেভিড’ সংযুক্ত। সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পেদ্রো দা কনসিকাও (১৮) এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থীর নাম জন হিউ মরিস (৮৬)।
উল্টে গেছে ব্রেক্সিট জনমত
১৯৭৩ সালে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য ছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু অভিবাসী ইস্যুতে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় ২০১৬ সালে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকার। এ লক্ষ্যে গণভোটের আয়োজন করা হয় এবং যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ জনগণ ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে এবং ৪৮ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দেন। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার ব্যাপারটি ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও সংস্থা ডেমোক্রেসি ক্লাব জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ব্রেক্সিট জনমতের চিত্র উল্টে গেছে। সংস্থাটি বলেছে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ ভোটার ব্রেক্সিটের বিপক্ষে এবং ৪৮ শতাংশ পক্ষে।
৪ কোটির ঊর্ধ্বে ভোটার, ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বচান কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৪ কোটি ৬০ লাখ। তবে ডেমোক্রেসি ক্লাবের মতে, মোট ভোটারের সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, যুক্তরাজ্যের নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তারপর গত ৮ মাসে ভেঅট দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বয়সে পৌঁছেছেন আরও কয়েক লাখ ভোটার।
ভোটগ্রহণের জন্য ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে প্রায় ৪০ হাজার অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
হুমকির মুখে সুনাকের ১৫ মন্ত্রী
যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মন্ত্রিসভার ২৭ জন সদস্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জরিপের তথ্য অনুসারে, এই ২৭ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ জন নির্বাচনে তাদের জয় নিয়ে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। এদের মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট, প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস এবং সরকারি দলের পার্লামেন্টারি নেতা পেনি মরডাউন্টের নাম উল্লেখযোগ্য। তবে এই তালিকায় সুনাকের নাম নেই।
জনগণের আস্থা হ্রাস
রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থা কমছে ব্রিটেনের জনগণের। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মোট জনগণের মাত্র ১২ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থাশীল। অথচ ২০২২ সালে এই হার ছিল ২০ শতাংশ।
এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোট ভোটারদের ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে মোট টার্নআউট কত হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
সূত্র : এএফপি