ফখরুল-আব্বাসসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি পেশাজীবীদের

0

বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সিরাজগঞ্জ জেলা ড্যাবের সদস্য সচিব ডা. আতিকুল আলম ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ আজিজ, বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. ফাতেমা, দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ পেশাজীবী ও জাতীয় নেতাদের বিনা অভিযোগ ও ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে গায়েবি মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ২২টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

আজ রোববার (৫ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডা. এম এ আজিজকে তার মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের পেশাগত চেম্বার থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তিনি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন। ডা. আতিকুল আলমকে সিরাজগঞ্জ , প্রফেসর ফাতেমাকে রাজশাহী এবং ডা. জাহিদুল কবিরকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশ সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, ডা. আতিকুল আলম, ডা. এম এ আজিজ, প্রফেসর ডা. ফাতেমা ও ডা. জাহিদুল কবির জাহিদ চারজনই অত্যন্ত মেধাবী, দক্ষ ও পেশাদার চিকিৎসক। দেশের এই গর্বিত নাগরিকদের অসম্মান, নির্যাতন, নিপীড়ন জাতির জন্য মঙ্গল ডেকে আনবে না। এমনিতেই সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক পরিবেশ না থাকায় দেশের মেধাবীরা এখন দেশে থাকতে চাইছে না। নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র কায়েমের পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা যেভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে; তাতে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজান ওমর বীর উত্তমসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বানচাল করে ২০১৮ সালের মতো আবারও ক্ষমতা দখলের হীন উদ্দেশে অন্যায়ভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে পেশাজীবী নেতারা বলেন, বিরোধীজোটের কর্মসূচিকে ঘিরে যেভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় অত্যন্ত নিন্দনীয়। একটা পরিস্থিতি তৈরি করে যেভাবে জাতীয় ও বিরোধী দলের নেতাদের গণগ্রেফতার, খুন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নামে গণহারে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে তা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। দেশজুড়ে সরকার একটা ভীতিকর ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সভা-সমাবেশের অধিকার মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। সভা-সমাবেশে বাধা এবং কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের গণগ্রেফতার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার পরিপন্থি।

পেশাজীবী নেতারা বলেন, সরকার দেশ থেকে আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে একটা মগের মুল্লুক কায়েম করেছে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ পুলিশের হাতেই এখন মানুষের জীবন অনিরাপদ। রাষ্ট্রীয় এ বাহিনীকে সরকার দলীয় ঠেঙ্গারে বাহিনীতে পরিণত করেছে। এভাবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হচ্ছে।

আমরা জানি, পুলিশ বাহিনীর মূল দর্শন ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’।এই মূলমন্ত্র নিয়েই পৃথিবীতে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে ,যার সদস্যরা কেবল জনসাধারণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবে। অথচ আমরা এখন দেখছি পুরো উল্টো চিত্র। পুলিশের সামনেই সরকারি দলের অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়ায় পুলিশ তাদের ধরে না। পুলিশ উল্টো তাদের অপকর্ম করার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। যারা গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তাদের কারো কারো গায়ে পুলিশের পোশাক আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি নির্দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিনা কারণে হত্যা করছে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। বিনাউস্কানিতে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ নয়াপল্টনের লাখো মানুষের মহাসমাবেশ পন্ড করতে যাওয়ায় একজন পুলিশ ও বিরোধীদলের একজন নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে।

গত এক সপ্তাহে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের একজন পুলিশ, একজন সাংবাদিক, বাকিরা বিরোধীদলের নেতাকর্মী। বিরোধী দলের নিহত নেতাকর্মীরা হচ্ছেন: শামীম মোল্লা, আবদুর রশিদ, জাকির হোসেন, রাসেল হাওলাদার, সেফায়েত উল্লাহ, বিল্লাল মিয়া, দিলু আহমেদ জিলু, আশিক মিয়া, বিপ্লব হাসান বিপুল। পুলিশের টিয়ারসেলে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া। ফরিদপুরে স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে বাসায় না পেয়ে তাত স্ত্রী রঞ্জুয়ারা বেগমকে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের এক পর্যায়ে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। যা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের নমুনা।

কতিপয় পুলিশ অফিসার যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা নাকি দলীয় ক্যাডার বুঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ অফিসাররা যখন বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যত জন রয়েছে আমরা কাউকে ছাড়ব না। লুকিয়ে থেকে লাভ হবে না কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’, তখন মানুষের বুঝতে আর অসুবিধা হয় না যে এ বাহিনীকে সরকার দলীয় ঠেঙ্গারে বাহিনীর মতো ব্যবহার করছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অন্যায় নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন- বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিবব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মোঃ আব্দুস সালাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব সভাপতি প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান ও যুগ্মআহ্বায়ক প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাছিন আহমেদ, এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন ও মহাসচিব কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জিয়া পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আহবায়ক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও যুগ্মআহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও সমন্বয়ক ডা. জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল ও মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম, এমবিএ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব সভাপতি সৈয়দ আলমগীর ও মহাসচিব শাকিল ওয়াহেদ, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- জেটে আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম রুহুল আমীন আকন্দ, ডিপোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাইফুজ্জামান সান্টু ও মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব) সভাপতি জাহানারা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এম-ট্যাব) সভাপতি এ কে এম মুসা (লিটন) ও মহাসচিব মো. বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ইউনানী আয়ুর্বেদিক গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আগড্যাব) সভাপতি ডা. মির্জা লুৎফর রহমান লিটন ও মহাসচিব ডা. আমিনুল বারী কানন, ডিপ্লোমা এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডি-এ্যাব) সভাপতি মো. জিয়াউল হায়দার পলাশ ও মহাসচিব সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ফিজিওথেরাপিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (প্যাব) সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কল্লোল ও সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীরুল আলম।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com