কৃষ্ণসাগরে উত্তেজনা তৈরির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

0

কৃষ্ণসাগরে মার্কিন ড্রোন ধ্বংস নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগুর সাথে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। পুরো ঘটনার জন্য ওয়াশিংটন প্রথম থেকেই মস্কোকে দায়ী করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত বুধবার মস্কোর সাথে কথা বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। রয়টার্স ও আলজাজিরা।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক বেশ বিরল। তবে কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি দামি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ধ্বংসের পর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সাথে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই তৃতীয়বারের মতো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম কথা হয়। তবে অস্টিন পেন্টাগনের সংবাদ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু চেপে গেছেন। তিনি শুধু বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য যেকোনো সঙ্ঘাতের বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়। এ কারণে রাশিয়ার সাথে যোগাযোগের রাস্তা খোলা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

আমি বারবার বলেছি বড় শক্তিগুলোর উচিত স্বচ্ছ হওয়া এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ ধরে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে তার ড্রোন ওড়ানো অব্যাহত রাখবে। রাশিয়ারও উচিত তাদের সামরিক বিমানকে নিরাপদ ও পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালনা করা।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, যা ঘটেছে তা আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় রুশ পাইলটদের আক্রমণাত্মক, ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। মার্কিন কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, রাশিয়ার জেটটি সংঘর্ষের আগে ৩০ মিলিয়ন ডলারের ড্রোনটির ওপরে জ্বালানি ফেলেছিল। রাশিয়া ড্রোনটি হয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেনি। তবে তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ ইচ্ছাকৃত ছিল। এসবের ভিডিও প্রমাণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।

ড্রোনটিকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এটি এখন ১২১৯ থেকে ১৫২৪ মিটার গভীর পানিতে ডুবে আছে। ফলে এটি উদ্ধার সহজ হবে না। তবে ড্রোনটি উদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ রাশিয়ার হাতে এই ড্রোন পড়লে তা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নজরদারি প্রযুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে।

এ দিকে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা কৃষ্ণসাগরে বিধ্বস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে। বুধবার এই ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার চেষ্টার কথা রাষ্ট্রীয় টিভিতে জানিয়েছেন রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ। রোশিয়া-১ টিভি চ্যানেলে তিনি বলেন, এটি আমরা উদ্ধার করতে পারব কি না তা আমি জানি না। কিন্তু একাজ করতেই হবে। আমরা অবশ্যই এটা করব। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও ড্রোনটির অবস্থান শনাক্ত করতে চায়। এটি কখনো উদ্ধার করা সম্ভব না হতে পারে- এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। তবে কিরবি বলেন, রাশিয়া যদি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারও করে তাহলেও তারা যাতে এটা থেকে খুব বেশি তথ্য পেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। তা ছাড়া ড্রোনটি অনেক গভীর পানিতে পড়ায় এটি উদ্ধার করা কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং হবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল যে, সংঘর্ষের আগে রাশিয়ার জেট বিমানগুলো বেশ কয়েকবার ড্রোনের ওপর জ্বালানি ফেলেছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেন, ড্রোনটি ওড়ার অযোগ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট ধরে ড্রোনটিকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে রাশিয়ার দু’টি যুদ্ধবিমান। এরপর তারা এটিকে আঘাত করে সমুদ্রে ফেলে দেয়।

ওয়াশিংটনের শীর্ষ জেনারেল জানিয়েছেন, “রাশিয়ার জঙ্গি বিমানের বাধার পর মার্কিন নজরদারি ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার মাধ্যমে মস্কোর বাড়তে থাকা আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শিত হয়েছে। অপর দিকে রাশিয়া ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে বলেছে, ক্রাইমিয়ার কাছে ড্রোন উড়ানো উত্তেজনা বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করবে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে বলেছেন, ক্রাইমিয়ার উপকূল দিয়ে আমেরিকার ড্রোন ফ্লাইট পরিচালনা ‘উসকানিমূলক আচরণ’ এবং এতে ‘কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে।” এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে রাশিয়ার কোনো আগ্রহ নেই কিন্তু ভবিষ্যতে (তারা) যথাযথ অনুপাতে প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’

২০১৪ সালে রাশিয়া তার অংশ করে নেয়ার আগ পর্যন্ত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ ইউক্রেইনের অংশ ছিল। শোইগুর সাথে কী আলাপ হয়েছে তার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি অস্টিন। কিন্তু এক সংবাদ সম্মেলনে আবার বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন যেখানে অনুমোদন করে সেখানে উড়া অব্যাহত রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি রাশিয়ার আকাশযানগুলোকে নিরাপদ ও পেশাদারি ধরন বজায় রাখতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের সঙ্কটের সময় সামরিক লাইনে যোগাযোগ করাসহ ‘সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা’ উচিত। পেন্টাগনের সংবাদ সম্মেলনে অস্টিনের পাশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি উপস্থিত ছিলেন। মিলি পৃথক এক কলে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে কথা বলেছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com