পার্লামেন্ট, ইটস এ ‘ক্লাব’ অব আওয়ামী লীগ: বিএনপি

0

পার্লামেন্ট, ইটস এ ‘ক্লাব’ অব আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন
জাতীয় সংসদকে সরকার ‘একদলীয় ক্লাবে’ পরিণত করেছেন বলে ।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখুন, গণতান্ত্রিক যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ওরা (সরকার) ধ্বংস করেছে। পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট কী? এখন যে পার্লামেন্ট তারা তৈরি করেছে এটা কোনো পার্লামেন্ট। এটা একদলীয় একটা ক্লাব তৈরি করেছে। ইটস এ ক্লাব অব আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনি ব্যবস্থা ধবংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের গেটওয়ে হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচন করে আপনি দেশ চালানোর জন্য পার্লামেন্ট তৈরি করবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন… তাই না। সেই নির্বাচনি ব্যবস্থাকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। মানুষ ভোটই দিতে যায় না। ভোট দিয়ে কী হবে? ভোট তো আমার থাকবে না, আমার ভোট তো অন্যজন নিয়ে যাবে। এজন্য যতকিছু কারসাজি করা দরকার তারা (সরকার) করেছে। কখনো ১৫৪ জনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ঘোষণা করে দেওয়া, কখনো যে তারিখে ভোট তার আগের রাত্রে ভোট করে নেওয়া এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাদের পক্ষে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা। এই যে কাঠামোটাকে তারা নষ্ট করেছে।

জনগণের উত্তাল তরঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে যাবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। কিসের ভোট! তোমাদের ভোটও আমরা দেব। কথায় কথায় বলে, গণতন্ত্র হবে আমাদের মতো করে। অথচ তাদের গণতন্ত্র তো বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা।

ফখরুল বলেন, অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায়। অথচ ৭২-৭৫ সালে গণতন্ত্র হরণ করে কেন বাকশাল করতে হয়েছে, জিজ্ঞাসা করলেই তাদের গায়ে আগুন লেগে যায়।

‘আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। ভোটাধিকার চাই। গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ ভোট দিতে যেতে চায় না। আজকে যে সংসদ আছে, সেটা হলো একদলীয় ক্লাব অব আওয়ামী লীগ। তাই আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদেরকে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথে রক্ত দিতে হচ্ছে, প্রাণ দিতে হচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাই। দেশের মানুষকে বাঁচাতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা একটি অসম যুদ্ধ সংগ্রাম করছি। যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অত্যন্ত প্রভাবশালী। যাদের হাতে রয়েছে রাষ্ট্রশক্তিসহ বন্দুক পিস্তল গ্রেনেড, যা তারা ছুঁড়ে মারে আর আমাদের নামে মামলা দেয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা- বাংলাদেশের মানুষ না খেয়েও হাসে। তারা গণতান্ত্রিক দেশে কথা বলতে চায়। মৌলিক অধিকার আদায়ে তাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নাই। সেই লক্ষ্যে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফার প্রথম দাবি হচ্ছে, এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তাদের অধীনে নির্বাচন। জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করব।

তিনি বলেন, আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদেরকে বাঁচতে হবে। আমাদের এ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হবে। স্বাধীনতা রাখতে হবে। মানুষগুলোর সমৃদ্ধি রাখতে হবে। কল্যাণ রাখতে হবে।

২৭ দফার রূপরেখাকে বিএনপির স্বপ্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চয়ই এটা জনগণের সামনে তুলে ধরব। এটা একটা ড্রিম। ড্রিম ছাড়া কখনো সফল হওয়া যায় না। আমরা স্বপ্ন দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যে, তিনি সঠিক সময়ে দলকে সঙ্গে নিয়ে এই রূপরেখা জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং ইতোমধ্যে আমাদের জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে বলব, এ বিষয়ে সারাদিন ধরে ওয়ার্কশপ করুন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পেশাজীবীদের নিয়ে মতামত নিয়ে আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে পারি সেজন্য উদ্যোগ নেবেন।

‘দেশের জনগণের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা, ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে অপমান করে সপ্তম শ্রেণিসহ বিভিন্ন শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর নিন্দা এবং ওই সব বই প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক  এ আলোচনা সভা হয়। ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করা হয়।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম হাফিজ কেনেডী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুর রহমান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বক্তব্য রাখেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com