ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে যে অনিয়ম চলছে তা এ স্বাধীন দেশে কাম্য নয়: ইবরাহিম

0

রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ১৫০ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ও ঢাকার বিজয় সরণির কলমিলতা বাজারের ক্ষতিপূরণ দেওয়া অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদিরের পরিবার।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর ফ্রিডম ফাইটার্স ফ্যামিলি’ শীর্ষক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন ও মুক্ত আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়। এসময় তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ও কলমিলতা বাজার নিয়ে যে অনিয়ম চলছে তা এ স্বাধীন দেশে কাম্য নয়। জেলা প্রশাসক বারবার সমাধানের আহ্বান জানালেও সিটি করপোরেশন সমাধান করছে না। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সিটি করপোরেশনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো অতি দ্রুত বিষয় দুটির সমাধান করুন। তা না হলে একদিন এর জন্য আপনাদের জবাবদিহিতা করতে হবে।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প এবং কলমিলতা বাজার নিয়ে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে তা বন্ধ করে সমাধান করুন। তা না হলে একদিন আপনাদেরও জবাবদিহিতা করতে হতে পারে।

লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য নুরতাজ আরা ঐশী বলেন, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প একটি পাইলট পরীক্ষামূলক প্রকল্প। এই প্রকল্পে সরকারের একটি টাকাও বিনিয়োগ করা হয়নি। পুরো প্রকল্পটি আমার বাবা তার নিজের সম্পদ বিক্রি করে গড়ে তুলেছেন। নর্থ সাউথ প্রপার্টি একটি বিনিয়োগ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এটি একটি পিপিপি অর্থাৎ সরকারি বেসরকারি অংশীদার প্রজেক্ট।

তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে ২০০৩ সালে করা চুক্তি বাতিলের কোনো শর্ত নেই। সরকার চাইলেও কোনো শর্ত কিংবা চুক্তি বাতিল করতে পারবে না। ২০১০ সালে প্রকল্প থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী কায়দায় এক কাপড়ে নর্থ সাউথ প্রপার্টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমার বাবার পরিবার এবং তার কর্মচারীদেরকে প্রকল্প থেকে অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে বের করে দেওয়া হয়।

ঐশী বলেন, আমার বাবা তথা নর্থ সাউথ প্রপার্টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের রেখে যাওয়া বিশাল মালামাল ও অর্থ-সম্পদ আজও লুটপাট করে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পবিরোধী একটি চক্র। নর্থ সাউথ প্রপার্টির চেয়ারম্যান আমাদের পরিবারকে ২০১০ সালে দেশ ছাড়া করা হয়। এমনকি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আমার বাবা আব্দুর রহিম দেশে আসলে, সঙ্গে সঙ্গেই তাকে র্যাব দিয়ে গুম করা হয় এবং ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের পাবলিক রিলেশন অফিসার ইসমাইল হোসেন বাতেনকে ২০১৭ সালে গুম করা হয়। এরপর থেকে এখনো তাকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি।

নুরতাজ আরা ঐশী বলেন, ঢাকার বিজয় সরণিস্থ কলমিলতা বাজারটির প্রকৃত মালিক আমার বাবা। আজ অবধি ডিএনসিসি ও তার পূর্বসূরিগণ পরস্পর পরস্পরের যোগসাজশে আইনের অপপ্রয়োগ করে জবরদখল করে রেখেছে। যদিও মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট আমাদেরকে দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একপর্যায়ে তৎকালীন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কোর্টের আদেশ মেনে সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিসি ঢাকাকে লিখিত প্রস্তাব পাঠান। হঠাৎ মেয়র আনিস পরলোকগমন করেন। এই সুযোগকে ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম দুর্নীতির মানসিকতায় ডিসি ঢাকাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের চাহিদাপত্র না দিয়ে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ করছেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাতে চাই, আপনি দয়া করে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দুইটি বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের জন্য নির্দেশ দেবেন বলে আমরা আশা করছি।

কর্মসূচিগুলো হলো- ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের বাধাগুলো দূর করা ও কলমিলতা বাজারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা, ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নর্থ সাউথ প্রপার্টির চুক্তি বাতিল আদেশ শিগগির প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করা, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রের দায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা, ভূমি মন্ত্রণালয় ও নর্থ সাউথ প্রপার্টির মধ্যে যাবতীয় বিরোধ সালিশি বোর্ডের মাধ্যমে সমাধান করা, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প সংক্রান্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের বন্ধ হওয়া তদন্ত কার্যক্রম পুনরায় চালু করা।

সেই সঙ্গে মেয়র আতিকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জাতির সামনে তুলে ধরা। এছাড়া শহীদ পরিবার হিসেবে আব্দুর রহিম সাহেবের পরিবারের সদস্যদের জান-মাল ও সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com