ব্রিটেনে হিন্দু প্রধানমন্ত্রী, বিজেপিকে শিক্ষা নিতে বললেন থারুর
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক মঙ্গলবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ব্রিটেনের রাজা ৩য় চার্লস এই দিন তাকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে সরকার গঠন করার অনুমতিও দিয়েছেন।
ব্রিটেনের গত ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের উত্থান থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপিসহ সব দলেরই শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জেষ্ঠ্য নেতা শশী থারুর।
২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে সুনাক বিবিসিকে বলেছিলেন, আত্মপরিচয় তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, তার বাবা-মা যুক্তরাজ্যে বসতি গেড়েছেন। তাই তিনি এমন প্রজন্মের মানুষ যার জন্ম সেদেশে হলেও তার বাবা-মার জন্ম অন্যখানে।
নিজের সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে বলতে গিয়ে সুনাক বলেন, সপ্তাহ শেষে তিনি মন্দিরে যান। তিনি একজন হিন্দু।
মঙ্গলবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে শশী থারুর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে এখন আমাদের স্বীকার করে নেওয়ার সময় এসেছে যে, বর্ণবাদের যে কলঙ্কময় ইতিহাস ব্রিটেনের ছিল, একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও বাদামি বর্ণের এশীয় ব্যক্তিকে নিজেদের সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমে সেই কলঙ্ক থেকে দেশটি ইতোমধ্যেই নিজেকে অনেকখানি মুক্ত করে নিতে সক্ষম হয়েছে।’
‘আমাদের দল কংগ্রেসেও কিন্তু এই ব্যাপারটি রয়েছে। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী জাতিগতভাবে একজন ইতালীয় ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তার নেতৃত্বে দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এবং তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ থেকে সরে গিয়ে মনমোহন সিংকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। মনমোহন সিং ভারতের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র শিখ ধর্মাবলম্বী প্রধানমন্ত্রী। দুই মেয়াদে টানা দশ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।’
‘কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বে বর্তমানে দেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মেরুকরণ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আমরা কি কল্পনা করতে পারি যে অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভারতে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী দেখতে পাবো, যিনি হিন্দু নন— জৈন, শিখ, বৌদ্ধ? বিজেপির হিন্দুত্ববাদ কি এ ব্যাপারটি সমর্থন করবে?’
‘কিংবা আপনার কি মনে হয়, কোনো ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে বিজেপি তাকে স্বাগত জানাবে?’
২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস জয়ী হয়; কংগ্রেসের সভাপতি হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি সোনিয়া গান্ধী। মূলত বিজেপির ব্যাপক আপত্তির কারণেই তা সম্ভব হয়নি।
নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল— একজন বিদেশি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও যদি সোনিয়া গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিজেপির জেষ্ঠ্য নেত্রী সুষমা স্বরাজ হুমকি দিয়েছিলেন— সোনিয়া গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে প্রকাশ্যে মাথা ন্যাড়া করে ফেলবেন তিনি।
বিরোধী দলের এই ব্যাপক আপত্তির কারণে এই পদ থেকে পিছু হটেন সোনিয়া এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দলের জেষ্ঠ্য নেতা মনমোহন সিংয়কে মনোনীত করেন। তারপর ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও জয়ী হয় কংগ্রেস এবং ফের দেশের প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন। সেই হিসেবে টানা ১০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিখ ধর্মাবলম্বী এই জেষ্ঠ্য কংগ্রেস নেতা।
এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শশী থারুর বলেন, ‘(ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর) বিজেপি ইতোমধ্যে বলা শুরু করেছে যে ব্রিটেনের যা আছে, আমাদেরও তা-ই রয়েছে। কিন্তু এটা একদমই কপটতা এবং ভণ্ডামীপূর্ণ কথা।’
‘কারণ, হিন্দুরা যুক্তরাজ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ঋষি সুনাক উঠে এসেছেন সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে।’