পদ্মায় ছাত্রলীগ সভাপতির অবৈধ বালু বাণিজ্য, প্রশাসন নীরব!

0

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, তিনি কোনো দফতরের অনুমতি না নিয়েই অবৈধভাবে নদীতে কাটিং ড্রেজার বসিয়ে কাজটি করছেন।

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন, অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর মানিকগঞ্জ অংশে নির্মিত বেড়িবাঁধ এখন ভাঙনের মুখে। এত কিছু হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান ছাড়াও অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলার দোহার সীমানায় নয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গত মার্চে ড্রেজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শাহজাহান নামে এক শ্রমিককে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করলেও উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদীর ২০০ মিটার দূরে হারুকান্দি ও ধূলসূরা ইউনিয়নের মাঝামাঝি কাটাখালী বয়রার চরে কাটিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। সরকারি কোনো দপ্তরের অনুমতি না নিয়েই এ কাজ করাচ্ছেন ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান। তার এ অবৈধ ড্রেজিংয়ে জড়িত নয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ মিয়া।

উপজেলার বুক চিরে যাওয়া পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে আল ফাতেহা ড্রেজিং প্রকল্প, স্বপ্নের বাংলা ড্রেজার- ১ ও ২, সোনার তরী ড্রেজার, এম এম সাহা ড্রেজার। এসব ড্রেজার দিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। জানা গেছে, প্রতি চল্লিশ মিনিট পরপর ৯ হাজার ঘনফুট বালু কার্গো ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একেকটি কার্গো ভর্তির আনুমানিক মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, নদী থেকে বালু নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক কার্গোয় লোড করা হয়। প্রতিদিন গড় হিসেবে ৮ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়। এসব বালু আশপাশের গদি-জেলাসহ ট্রাক-যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।

বর্তমানে ধূলসূরা এলাকায় বসবাস করেন ময়না বেগম। পদ্মার ভাঙনে যাযাবর জীবন তার। আগে অন্য এলাকায় থাকতেন। এখন নদী পাড় এলাকার যে স্থানে থাকছেন সেখানেও আতঙ্ক, কবে ভাঙন ধরে! তিনি বলেন, সরকার নদী আর যাতে ভাঙতে না পারে যেজন্য বেড়িবাঁধ। কিন্তু নেতারা নদী থেকে যেভাবে বালু নিচ্ছেন বর্তমান বাঁধও থাকবে না।

সরাসরি লুৎফর আর শহিদের নাম উল্লেখ করে এক স্থানীয় জানান, নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এ দুই নেতা যেভাবে নদী থেকে বালু তুলছেন, বাঁধ টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, সরকারি দফতরের অনুমতি ছাড়া পদ্মা নদী থেকে দেদারসে বালু তোলা সম্ভবই না। কিন্তু লুৎফর ও শাহিদ সেটা করে দেখাচ্ছেন। কীভাবে সম্ভব হচ্ছে তা কারও বোঝার বাকি নাই।

তারা আরও জানান, ড্রেজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে সংঘর্ষ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়। এতে শাহজাহান নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি। এ ঘটনায় পরবর্তীতে একটি মামলা হয়। কিন্তু কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। এসব হাস্যকর বিষয়।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ করি দল চালাতে টাকা লাগে, যে কারণে এই ব্যবসা করছি। ’

এই প্রতিনিধিকে ঠাণ্ডা মাথায় হুমকিও দেন লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘শোনেন, বেশি প্রশ্ন করবেন না। কারণ আপনারও বোঝা উচিৎ আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। আমরাই কোনো না কোনো দিন মূল নেতৃত্বে আসবো, কিংবা জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসবো। বিষয়টা বুঝতে হবে। ’

ঢাকা জেলার দোহার নয়াবাড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ মিয়া বলেন, ‘ড্রেজার ব্যবসায় আমি একা করি তা কিন্তু না। অনেকেই করছে, তাই করি। আমার এ ব্যবসায়ের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও রয়েছে। কিন্তু নাম হয় আমার একার। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখান থেকে যে টাকা লাভ হয়, লাভের সব টাকা সবাই ভাগ করে নেয়। এটা মূলত নদী শাসনের কাজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com