ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সিলেটের বন্যা
থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যার পানিতে। উজানে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসনের হিসেবে সিলেটের ছয়টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়। পানির তোরে ভেঙে যাচ্ছে নদীরক্ষা বাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মিজোরাম প্রদেশের কয়েকটি স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই কংস, ধনু-বাউলাই, খোয়াই, মুহুরী নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১১০ থেকে বেড়ে এখন ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই নদীর শেওলা পয়েন্টের পানি ১৯ থেকে বেড়ে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ দিকে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি ১২৮ থেকে বেড়ে ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ ছাড়া এই নদীর আরো দু’টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপরে উঠেছে। এই নদীর সিলেট পয়েন্টের পানি ২৯ এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে পানি।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৮৭ মিলিমিটার। যা গত সোমবার ছিল সিলেটের জাফলংয়ে ২২৬ মিলিমিটার। এ ছাড়া সিলেটে ৭২, সিলেটের লালাখালে ১৭৫, কানাইঘাটে ৭০, শেওলা ১২৭, জকিগঞ্জে ১১৯, জাফলং ১৬৭ এবং লাটুতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে সুনামগঞ্জে ১০২, সুনামগঞ্জে লরেরগড়ে ১০০, মহেশখোলাতে ৬১, কুড়িগ্রামে ৫৯ এবং নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে ৯৫ এবং নেত্রকোনার জারিয়াজঞ্জালে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এ দিকে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গতকাল ৩৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা গত সোমবার ছিল ৪২৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া আসামের গোয়ালপাড়ায় ৫৮, তেজপুরে ৪৮, দিব্রগড়ে ৫১, শিলচরে ১১০, ধুব্রি ৬১, অরুণাচলের পাসিঘাটে ৭০, মেঘালয়ের শিলংয়ে ৬১ এবং সিকিমের গ্যাংটকে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, বৃষ্টি না হলেও সিলেটে মিনিটে মিনিটে বাড়ছে পানি। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির সঙ্কুুলান হচ্ছে না সুরমার বুকে। বিপদসীমা অতিক্রম করে সুরমার পানিতে নগরের ছড়াখাল ভরে গিয়ে রাস্তাঘাট ডুবছে। সময় যত যাচ্ছে, ততই জোয়ারের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ছে। অনেকের বাসায় হাঁটুসমান পানি। মঙ্গলবার নগরের এমন অবস্থা অধিকাংশ এলাকার দেখা যায়। আর যদি কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয় তলিয়ে যাবে পুরো সিলেট নগর।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা আগের দিনের চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিতদের জন্য নগরের কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আজিজুর রহমান।
দেখা যায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্ট এলাকাগুলো নগরের উপশহর, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, পাঠানটুলা, লন্ডনী রোড, সাগরদিঘির পার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্তখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে। অব্যাহত পানিবৃদ্ধির কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের রাত কেটেছে নির্ঘুুম। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের ভোগান্তির যেন কোনো শেষ নেই।
গতকাল দুপুরে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই আবাসিক এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর উপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। গলির সড়কে কোমরপানি। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দা রোম্মান আহমদ বলেন, প্রতি মিনিটে পানি বাড়ছে। এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে দেখিনি। আমাদের ঘরের নিচতলা তলিয়ে গেছে। আমরা দোতলায় আশ্রয় নিয়েছি।
নগরীর মাছিমপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ তুষার আহমদ মান্না বলেন, দুর্ভোগের শেষ নেই! বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় রাতে কেউ ঘুমায়নি। জরুরি জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে রেখেছি। উপশহরের বাসিন্দা মাহমুদ হোসেন বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলের ভূমিকা আছে সত্য; কিন্তু সুরমা নদীর নাব্যতাসঙ্কট, নগরীর ড্রেন, নালা, ছড়া পরিষ্কার না থাকা, ময়লা-আবর্জনা ফেলে এগুলোর গতিপথ আটকে দেয়া, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবÑ এসবও কিন্তু এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী।
এ দিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নিম্নাঞ্চলগুলো এখন পানির নিচে। সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় লাখো মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়কও তলিয়ে গেছে। ফলে গ্রাম থেকে উপজেলা সদর কিংবা উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, বাজার, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এই বিষয়টা আতঙ্কের। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রথয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকের সবত্রই বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জমির কয়েক শ’ একর বোরো ক্ষেত। ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবজিবাগান, মৎস্যখামার ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে সাধারণ মানুষের ধারণা বন্যা এখানে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা সদরের সাথে প্রতিটি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শহরের রহমতবাগ এলাকায় ছাতক-সিলেট সড়ক তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের অলিতে গলিতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দোলারবাজার, ধারণ বাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার, পীরপুর বাজার, কপলা বাজার, বুরাইয়া বাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, লাকেশ্বর বাজার, চৌমোহনী বাজার, হাজীর বাজার, ইসলাম বাজার ও মাদরাসা বাজার। অনেকেই দোকান ও বাসাবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। বন্যার কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ চুনা কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ। নদীতে নৌকা-কার্গো লোডিং আন লোডিং বন্ধ। এ কারণে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য ত্রাণ ও ইউনিয়নে ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলার জন্য দাবি করেছেন উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, জাউয়াবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হক ও ভাতগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন।
উপজেলার উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, ভাতগাঁও, চরমহল্লা, দোলারবাজার, নোয়ারাই, ইসলামপুর, কালারুকা, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছাতক সদর ও ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নে সবজিবাগান, মৎস্যখামার, ঘরবাড়ি ও জমির বোরো ফসল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের নিচু এলাকার অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে অনেক মানুষ। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন সুমেন বন্যাকবলিত তার ওয়ার্ডের এলাকা পরিদর্শন করে তিনি জানান, বন্যার পানি অনেক বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ছাতক সরকারি হাইস্কুলে সাময়িক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরো বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা, বৌলাই ও পাটলাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করায় মঙ্গলবার সকাল থেকে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পরিস্থিতির অবনতিসহ হাওরবেষ্টিত দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামগুলোতে পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চার দিক পানিতে থই থই করছে।
উপজেলার নিম্নাঞ্চল, সীমান্ত এলাকা ও এমনকি উঁচু এলাকাও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। হাওরে কৃষকের ইরি ও বোরো ধান, বাদামের গাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হচ্ছে মৌসুমি সবজিও। নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। অনেকেই আধাকাঁচা পাকা ধান কাটতে পেরেছেন, অনেকেই পারেননি। এতে দিনমজুর ও গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দোলা বলেন, ঢলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলার ৭০ হেক্টর জমির ইরি ও বোরো ক্ষতি হয়েছে। ৫০ হেক্টর জমির বাদামগাছ তলিয়ে গেছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে থাকায় তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মিটার রিডার (পানি পরিমাপক) মাহতাব হোসেন জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিষখালী নদীর পানি বরগুনা সদর উপজেলার অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯২ মিটার অর্থাৎ বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তহুরা ইসলাম তমা বলেন, ‘এ জোয়ারে মোগো দুর্ভোগের শেষ ন্যাই। জোয়ারের পানিতে বাসাবাড়ির জিনিসপত্র ভাইসসা যায়। হেই সময় আর রান্দা-বারা মোগো অইবে না। জোয়ারের পানিতে বাড়ি তলাইয়া যাওয়ায় চুলায় পানি ঢোকছে। চুলা দিয়া পানি ফালাইয়া চাইর পাশে টিন দিয়া রান্দা লাগবে।’
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, বরগুনার তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নদীর পাশের এলাকার বাড়িঘর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।