ঈদের পণ্য কিনতেও ঠকবেন ভোক্তা

0

ঈদে সব শ্রেণির মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন পোশাকের সঙ্গে সামর্থ্য মতো ঘরে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে। এতে বাজারে এক ধরনের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। আর এই চাহিদা ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ক্রেতার পকেট কাটতে বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। প্রতি বছরের মতো এবারও বাজারে সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। রোজার পণ্যের পর এবার ঈদ পণ্য নিয়েও অসাধুরা কারসাজি করছে। মাংসের পর পোলাওর চাল ও মুগডালের দাম বাড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি দুধ, চিনি, সেমাই ও কিসমিস বাড়তি দরে বিক্রি করছে। সঙ্গে মসলা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বরাবরের মতো এবারও ঈদ ঘিরে পণ্য কিনতে বাজারে ঠকবেন ভোক্তা। এদিকে গত দুই বছর করোনাকালে মানুষ ঈদ উদযাপন করেছেন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এছাড়া তখন অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন-বোনাস হয়নি। সেই সময় আয় না থাকায় মা-বাবা, সন্তান নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনা সংক্রমণ কমায় সব শ্রেণির মানুষ তার আর্থিক দিক সচল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অনেকেই বড় চাকরি হারালেও ছোট চাকরি জোগাড় করেছেন। অনেকের ব্যবসা ছোট করতে হলেও আয় করছেন। তাই এবার সবাই ঈদ একটু ভালোভাবে উদযাপন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু মার্কেটে পোশাকের উচ্চমূল্যের সঙ্গে বাজারে চড়া মূল্যে পণ্যের দাম কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এতে এবারও একটি শ্রেণির মানুষ ভালো ভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন না।

রাজধানীর জিনজিরা বাজার, নয়াবাজার ও রায়সাহেব বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রতি কেজি পোলাওর চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেখা যায় এই এক মাসের মধ্যে প্রতি কেজি পোলাও চালে ১০-৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মুগ ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১০০-১৩০ ও এক মাস আগে ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মাংসের মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। যা এক মাস আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। যা আগে ২৮০-২৯০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক আগে ৫৮০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা। যা এক মাস আগে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সাঈদ বলেন, বাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই। প্রতিদিনকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারা কারসাজি করেন। রোজা এলেই বিক্রেতারা কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ান। আবার ঈদ আসার আগেও বিক্রেতারা আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল অবস্থা তৈরি করে। প্রতি বছরের মতো এবারও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি বছর একই অবস্থা হলেও সংশ্লিষ্টরা তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনে না। ফলে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, রোজা-ঈদসহ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলে দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে আইন আছে। সেই আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে ভোক্তা সুফল পাবে।

খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, বাজারে ৫০০ গ্রামের ডিপ্লোমা ও ডানো প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে ৩৩০-৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক কেজির ফ্রেশ প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ বিক্রি হয়েছে ৬২০ টাকা। যা এক মাস আগে ৫৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ওজনের মার্কস গুঁড়া দুধ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা, যা আগে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত লাচ্চা সেমাই বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা। যা এক মাস আগে ৩৫ টাকা ছিল। আর ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত চিকন সেমাই বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। যা আগে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোট এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা। যা এক মাস আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই দরে খোলা তেল পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে লিটার প্রতি প্রায় ৩৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে হঠাৎ করেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশেহারা করে তোলে। আবার নাযেহাল করে ঈদের আগে। কারণ বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই তদারকির সঙ্গে আইন ও শাস্তি জোরদার করা দরকার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com