কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনজুর আলমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং হয়রানিমূলক মামলায় কারাবরণ করছে দাবি করে তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন হাজারও মানুষ। সঙ্গে আছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও।
তার মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসছেন স্থানীয়রা। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকালে উখিয়া মরিচ্যাবাজার স্টেশনে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
মনজুর আলম বিএনপির নেতা হলেও তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও দলটি অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। তারা বলছেন, মরিচ্যাবাজারের চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে কাজ করে আসছেন তারা। বিষয়টি সামাজিক সম্প্রীতি ও মনুষ্যত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।
বিএনপি নেতা মনজুর আলমের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হলদিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, এর পরও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি— মনজুর মেম্বার ষড়যন্ত্রের শিকার। একজন জনপ্রতিনিধির চাঁদাবাজি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি একজন মরিচ্যাবাজারের ব্যবসায়ী। কিন্তু আমি নৌকা মার্কার চেয়ারম্যানের পক্ষে নির্বাচন করার কারণে ঘোড়া মার্কার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকের মতো আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে।
মরিচ্যাবাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে নেওয়ার কারণে ওই চাঁদাবাজ চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে মনজুর মেম্বারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে বলে দাবি শ্রমিক লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের।
একইভাবে মনজুর আলমের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তার মুক্তির দাবি করেছেন হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজির আহমদ, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি জয়নাল উদ্দিন বাবুল, উখিয়া বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি মিলন বড়ুয়া, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস ডন, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল্লাহ সিকদার, মরিচ্যাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজীর সওদাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক মৌলবী আবুল হোসাইন, যুবনেতা সোহেল রানা, শেখ জামাল, শেখ কামাল, হেলাল উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম।
তারাও দাবি করেন, একজন চেযারম্যানের চাঁদাবাজি ও ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মনজুর আলমকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তারা বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউনএও) জেলা প্রশাসক ও সরকারে উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে মনজুর আলমের মুক্তি দেওয়া না হলে আগামীতে দোকানপাট বন্ধ ও লাগাতার কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে মরিচ্যা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে মরিচ্যাবাজারে চাঁদাবাজি আর বরদাশত করা হবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।
এর আগে প্রথম রমজানের দিন হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দোকানপাট বন্ধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন মরিচ্যাবাজারের ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন অনেকেই।
যদিও বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন হলদিয়া পালংয়ের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। তিনি জানান, উখিয়া মরিচ্যাবাজারে সরকারি শেড ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্প নিয়ে নিয়মিত চাঁদা তুলে আসছিল একশ্রেণির চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। চাঁদাবাজদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী। অভিযোগের ভিত্তিতে মরিচ্যাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটদের বাজার থেকে উচ্ছেদ করা হয়। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়া চক্রটি নানাভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।