বাজারে ভোগ্যপণ্য কিনতে পিষ্ট ভোক্তা
ভোগ্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণহীন দামে বাজারে পিষ্ট হচ্ছেন ভোক্তা। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, আটা-ময়দা, সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এমনকি জীবনরক্ষায় দরকারি ওষুধের দামও ক্রেতার নাগালের বাইরে। পাশাপাশি প্রতিদিনের অতিব্যবহৃত পণ্য-সাবান, টুথপেস্ট ও শ্যাম্পুর দামও বাড়ছে হু-হু করে। এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। দেখা যাচ্ছে প্রতিবছরের মতো এবারও রোজা ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা রোজা শুরুর আড়াই মাস আগেই (জানুয়ারি থেকে) রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। ফলে ভোক্তার এখন থেকেই পণ্য কিনতে নাভিশ্বাস বাড়ছে।
বাজার ঘুরে এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে রমজাননির্ভর পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি ছোলায় ৫-৬ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৮ টাকা বেড়েছে। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল ১০ ও ছোট দানার মসুর ডালে ৫-৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কারণ ছাড়াই কেজিপ্রতি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুরে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই অতিরিক্ত মূল্য দুই মাসে বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার আগেই তারা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে সংস্থাগুলোর মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি জানান, অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি বড় দানার মসুর ডাল ১০০ ও ছোট দানা ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। এছাড়া চিনি ৮০-৮৫, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ এবং সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. রাতুল বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এক কেজি সরু চাল কিনতে ৬৮-৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। গুরুর মাংসের কেজি ৬৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ব্রয়লার মুরগি কিনতে কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি কাপড় ধোয়ার ও গোসলের সাবান কিনতে ১০-৩০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে আসছে রমজান মাস। রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের দামও বাড়তি। এতে আমাদের মতো চাকরি করা মানুষ কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। বাজারে তেমন নজরদারি করতেও দেখা যায় না। যে যেভাবে পারছে ক্রেতার পকেট কাটছে। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।