ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের ইতিহাস: কয়েক দশকের প্রতিশোধের লড়াই
লেবাননের হিজবুল্লাহ সদস্যদের ওপর পেজার বিস্ফোরণের মাধ্যমে মঙ্গলবার যে আক্রমণ চালানো হয়, তা ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপ। বিস্ফোরণে ২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন এবং কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। হিজবুল্লাহ এই আক্রমণের জন্য সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
৪০ বছরের সংঘাত
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এই সংঘাত নতুন নয়; এটি প্রায় ৪০ বছর ধরে চলে আসছে। এই লড়াইয়ের সূত্রপাত হয় ১৯৮২ সালে, যখন ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ করে। ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল লেবাননে প্রবেশ করে এবং পিএলওকে তিউনিসিয়ায় পাঠানোর পরও দক্ষিণ লেবাননে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখে। এই আক্রমণের প্রেক্ষিতে লেবাননের শিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা ইরানের সহায়তায় হিজবুল্লাহ গঠন করেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের উপস্থিতি প্রতিহত করা।
১৯৮৩ থেকে ২০০০: ক্রমবর্ধমান সংঘাত
১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন ও ফরাসি বাহিনীর ব্যারাকের ওপর বোমা হামলা, যেটি ইসলামিক জিহাদ দাবি করেছিল, অনেকেই মনে করেন হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এর পরের বছরগুলোতে হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা ইসরায়েলি বাহিনীকে দক্ষিণ লেবাননের লিটানি নদী পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য করে। যদিও ইসরায়েল তাদের মিত্রদের মাধ্যমে দক্ষিণ লেবাননকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, ২০০০ সালে হিজবুল্লাহর চাপের মুখে ইসরায়েল পুরোপুরি সরে যেতে বাধ্য হয়।
২০০৬: জুলাই যুদ্ধ
২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর হাতে ইসরায়েলের দুই সেনার অপহরণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালায়। ৩৪ দিনব্যাপী এই যুদ্ধের ফলে প্রায় ১ হাজার ২০০ লেবানিজ এবং ১৫৮ ইসরায়েলি নিহত হন। লেবাননে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
২০২৩ থেকে বর্তমান: গাজা সংকট ও লড়াইয়ের পুনরুত্থান
২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের ওপর রকেট হামলা শুরু করে। এই সময়ের মধ্যে লেবাননের সীমান্তে ৫৬৬ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৯৭ হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়। ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়ায় লেবানন ও সিরিয়াতে একাধিক হামলা চালায় এবং হিজবুল্লাহ ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে।
২০২৪: পেজার বিস্ফোরণ ও প্রতিশোধের হুমকি
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহ সদস্যদের হাতে থাকা হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়, যেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ২ হাজার ৭৫০ জন আহত হন। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে এই হামলার জন্য দায়ী করে এবং কঠোর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই সংঘাতের ইতিহাসে প্রতিটি আঘাতের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
সূত্র: আল জাজিরা