অজুতে নবিজী (সা.) যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশির ভাগ সময় নামাজের জন্য নতুন করে অজু করতেন। যদিও তিনি কখনো কখনো এক অজুতে একাধিক ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অজু ছিল চমৎকার নিয়মতান্ত্রিকতা ও ধারাবাহিকতায় ভরপুর। তিনি যেভাবে অজু করতেন-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অল্প পানিতে অজু সম্পন্ন করতেন। কখনো তিনি এক মুদ (আনুমানিক ৫০০ গ্রাম) পানি দিয়ে অজু করতেন। কখনও তিনি প্রয়োজনের তাগিদে এর চেয়েও কম বা বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহার করতেন। তিনি নিজে যেমন অল্প পানি দিয়ে অজু করতেন তেমনি তাঁর উম্মতকে অজুতে পানি অপচয় করতেও নিষেধ করতেন।
অজুর ধারাবাহিকতা
নামাজের জন্য অজু করা ফরজ। কোরআনে বর্ণিত নিয়মের ধারাবাহিকতায় তিনি অঙ্গগুলো ধুইতেন। অজুর ফরজের ধারাবাহিকতা ঘোষণা করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ
‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধোও আর তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং টাখনুসহ উভয় পা ধোও।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে যেভাবে অজুর ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এ ধারাবাহিকতায় অজু করতেন। তিনি এমনটি করেননি যে, আগে পা ধুয়েছেন; তারপর হাত ধুয়েছেন। বরং তিনি আল্লাহর নির্দেশের ধারাবাহিকতা মেনে প্রথমে মুখ, তারপরে হাত, এরপর মাথা মাসেহ এবং সবশেষে পা ধোয়ার মাধ্যমে অজু করেছেন।
তিনি অজুতে কোনো কোনো অঙ্গ দুইবার, তিনবার ধৌত করেছেন। কখনও তিনি এক কোষ পানি দিয়ে করতেন এবং নাক পরিষ্কার করতেন। কখনও দুই কোষ পানি দিয়ে আবার কখনও তিন কোষ দিয়েও অনুরূপ করতেন। এক কোষ পানি দিয়ে তা করার সময় অর্ধেক মুখে দিতেন আর বাকী অর্ধেক নাকে প্রবেশ করাতেন। দুই বা তিন কোষ পানির মাধ্যমে কুলি করলে এবং নাক ঝাড়লেও প্রত্যেক কোষের একাংশ মুখে এবং অন্যাংশ নাকে দেয়াও সম্ভব। এছাড়া আলাদাভাবে মুখে পানি দিয়ে কুলি করা এবং তারপর আরেক কোষ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করাও বৈধ। তিনি ডান হাতের কোষে নাকে পানি দিতেন আর বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়তেন এবং পরিষ্কার করতেন।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া ব্যতীত কখনো অজু শেষ করেননি। প্রত্যেক অজুতেই তিনি তা করতেন। কখনো তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন বলে কোথাও প্রমাণিত হয়নি।
তবে প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে তিনি একটি অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার আগে আরেকটি অঙ্গ ধুয়েছেন। মাথা মাসেহ করেছেন। মাথা মাসেহ করার সময় কানের ভেতর ও বাহিরের অংশও মাসেহ করেছেন। তবে কানের ভেতর ও বাহির মাসেহ করার জন্য নতুন করে পানি নিতেন না। সবশেষে পা ধুইতেন। পায়ে মৌজা থাকলে তা মাসেহ করতেন।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অজু শুরু করতেন। আর অজুর শেষে পড়তেন-
اَشْهَدُ اَنْ لَّا إِلٰهَ اِلَّا ا للهُ وَحْدَه” لَا شَرِيْكَ لَه” وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًاعَبْدُه” وَ رَسُوْلُه”- اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই; তিনি একক ও শরিকবিহীন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
সুনানে নাসাঈর এ দোয়াটিও পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আন্তা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’
অর্থ : আপনি পবিত্র হে আল্লাহ! প্রশংসা আপনার। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আর আপনার দিকেই ফিরে যাই।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআনে বর্ণিত অজুর ফরজের ধারাবাহিকতায় ও সুন্নাতের দিকনির্দেশনায় অজু করা। অজুর শুরুও শেষের গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ ও দোয়াগুলো পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অজু করার তাওফিক দান করুন। আমিন।