বাহকরাই রূপ নিচ্ছে মাফিয়ায়, ক্যাডার ট্রেকিং সিস্টেমই মূল কারণ
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার আবুল হোসেন। ২০১৬ সালে ইয়াবাসহ আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানা পুলিশ। শুরুতে ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তিনি উত্তর চট্টগ্রামের মাদকের বড় ডিলারদের একজন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে কমপক্ষে ৮টি। শুধু আবুল হোসেন নন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সাড়ে তিন শতাধিক মাদকের ক্যারিয়ার এখন আবির্ভূত হয়েছেন মাদক মাফিয়া হিসেবে।
অপরাধবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “কোনো ব্যক্তি অপরাধীদের ‘ক্যাডার ট্রেকিং’ সিস্টেমে পড়লে আর ওই সার্কেল থেকে বের হতে পারে না। এ ক্যাডার ট্রেকিং সিস্টেমের কারণেই ক্যারিয়াররা পরিণত হচ্ছে মাদক মাফিয়ায়। বিভিন্ন দেশের অপরাধী চক্রগুলো সিস্টেম অনুসরণ করে দল ভারী করে। দেশের অপরাধী চক্রগুলোও এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে।”
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কিছু মাদক ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলেও বতর্মানে অনেকে মাদকের বড় ধরনের ডিলারে পরিণত হয়েছে। মাদক ক্যারিয়ার থেকে মাদক ডিলারে পরিণত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না থাকলেও এ সংখ্যা নেহাত কম নয়।’
এ বিষয়ে কথা হয় মাদকবিরোধী অভিযানে নিয়মিত নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তাদের মতে, ‘জীবিকার তাগিদে অনেকে মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনযাত্রা। কারাগারেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় মাদক মাফিয়াদের। তারা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। তখন তারা নিজেই ডিলার হয়ে অন্যকে দিয়ে মাদক বাহনের কাজ করান।’
চট্টগ্রামের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় তালিকাভুক্ত ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন ২ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে খুচরা মাদক ব্যবসায়ী প্রায় দেড় হাজার। এসব মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন শ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা। যারা ক্যারিয়ার হিসেবে প্রবেশ করলেও এখন বড় ডিলার কিংবা মাফিয়া হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের অন্ধকার জগৎ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে শুরুতে মাদকের বাহক হিসেবে কাজ করেন কেউ কেউ। মামলার বিচারকাজ দীর্ঘ সময় চলার কারণে মামলার খরচ চালাতে পরে তারা রূপ নেন মাদক ব্যবসায়ীতে।’