মানবাধিকারকর্মীদের ওপর খড়গ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটি খড়গ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার সংগঠন ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্স। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এ মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ। ২৬ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : এ হ্যাঙ্গিং সোর্ড অন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ইন বাংলাদেশ’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রশ্নবিদ্ধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মীরা আইনি বাধা ও হেনস্তাসহ সুদূরপ্রসারী পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এর আগে হত্যাসহ শারীরিক হামলার শিকার হওয়া মানবাধিকারকর্মীরা এখন দেখছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট, শৈল্পিক সৃষ্টি কিংবা সাধারণ কোনো বক্তব্য তাদের বড় ধরনের আইনগত ঝামেলার মধ্যে ফেলতে পারে। পুলিশের কাছে একটি সাধারণ অভিযোগের মাধ্যমে তারা শুধু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের নয়, একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্সের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই মানবাধিকারকর্মীদের চাকরি বা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তারা সামাজিকভাবে হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও নানা রকম দুর্ভোগের শিকার হওয়ায় অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মানবাধিকার নিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড সীমিত করতে বাধ্য হয়েছেন।
ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্সের নির্বাহী পরিচালক এন্ড্রু এন্ডারসন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ, হুমকি ও হামলার মুখোমুখি হন। তাদের সুরক্ষা দিতে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া কোনো বক্তব্য বা মতামতকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যেভাবে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এই আইনের যে ধারাগুলো পরিষ্কারভাবে হয়রানিমূলক, সরকারের উচিত দ্রুত সেগুলো বাতিল করা।’ প্রতিবেদনে ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্স আটজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করে। তারা হলেন-শরিয়ত মিয়া ওরফে শরিয়ত বয়াতি, লোকশিল্পী রিতা দেওয়ান, খুলনায় পাটকল শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসা রুহুল আমিন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে আলোচনায় আসা স্থানীয় বাসিন্দা ও তরুণ প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমিতুল মিম্মা, ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক তানভীর হাসান, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বারবার আশ্বস্ত করেছিল, তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করা হবে না। কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে স্পষ্ট দেখা গেছে, কোনো প্রভাবশালীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত করা, শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থন দেওয়া কিংবা পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত থাকাসহ মানবাধিকারকর্মীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনটি ব্যবহার করেছে।