এলজিইডির প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতি
কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন বহু প্রকল্পের বিষয়টি বারবার খবরের শিরোনাম হয়। এসব প্রকল্পের নামে যেসব ভয়াবহ অনিয়ম হয়ে থাকে তাও বহুল আলোচিত। এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পটুয়াখালী এলজিইডির বহু প্রকল্প কাগজে থাকলেও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, পটুয়াখালী এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, কাজের মান তো দূরের কথা, কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের কোনো হদিসই নেই। পটুয়াখালী পৌর শহরের দক্ষিণ পাশে উপজেলা পরিষদের খালে সেতারা ক্লিনিকের সামনে থেকে ইসহাক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় দেখানো হয়েছে আটটি লং আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। যার গড় দূরত্ব ৩০০ ফুটের একটু বেশি। এর মধ্যে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে মাত্র ৪০০ ফুট দূরত্বে সেতারা ক্লিনিকের সামনে সদর উপজেলার আরএইচডি পুকুরজানা টু বাসস্ট্যান্ড গ্রামীণ সড়কে ১৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ দেখানো হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বাস্তবে সেখানে কোনো ব্রিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। একটি আরসিসি গার্ডার ব্রিজের দরপত্র আহ্বানের সূত্রে তদন্ত দল গিয়ে দেখে ওই জায়গায় কোনো খালই নেই। কাগজে-কলমে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এমন বহু প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি তদন্ত টিম। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ২১টি ব্রিজের কাজ কোনো অবস্থাতেই শুরু করা যাবে না বলে প্রকল্প পরিচালক আদেশ দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ২০২১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে চারটি নোটিশে ৩২টি ব্রিজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে। প্রশ্ন হলো, এসব যারা তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন তারা কী করেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উল্লিখিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে নয়ছয়ের বিষয়টি এতটাই আলোচিত যে, বহু প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হয় না। কাজের ধীরগতির বিষয়টিও বহুল আলোচিত। জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় জনগণ সেগুলোর সুফল পায় না। শুধু তাই নয়, একটি ব্রিজের অভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু মানুষকে কী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা বারবার আলোচনায় আসে। প্রশ্ন হলো, দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া আচরণের সাহস পায় কোথায়? দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতি কমবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।