জানুয়ারি ৫— প্রার্থী-ভোটারবিহীন কলঙ্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অষ্টম বার্ষিকী। ২০১৪ সালের এই দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় কলঙ্কিত এক পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশবাসী, বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ হতবাক হয়ে পড়েন এমন নজীরবিহীন প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচন দেখে যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে অকল্পনীয়। ক্ষমতালোভী চক্র দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ভোটাধিকারকে নির্লজ্জভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে । যে বাংলাদেশি জাতি ভোটের অধিকার নিশ্চিতে ১৯৭১ সালে লাখো জীবনের আত্নত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, আশির দশকে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেই জাতির ভোটাধিকার অবলীলায় কেড়ে নেয় ক্ষমতাসীন অপশক্তি।
এই পাতানো নির্বাচনের পটভূমি তৈরি করতে প্রথমেই, জুন ৩০, ২০১১, জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের মাধ্যম আওয়ামী অপশক্তি নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। গুম-খুন-হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোকে দমনের ব্যর্থ চেষ্টা করে।
পাতানো নির্বাচনের তৎপরতা বুঝতে পেরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
ওই নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে সংঘটিত হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। ক্ষমতাসীনদের হাতে ভোটের দিন ও আগের দুই দিনে অন্তত ২৫ জন মারা যান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫৪টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয় যা ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নজীরবিহীন।
১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষোণার ফলে এই নির্বাচনে সারা দেশের মোট ৯,১৯,৬৫,৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জন। অর্থাৎ, প্রথমেই অর্ধেকের বেশি মোটাভাটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
১৪৬টি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলো সকাল থেকেই ছিল ফাঁকা। কয়েকটি আসনের ৪১টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি সারা দিনেও।
ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারশূন্য থাকলেও নির্বাচন কমিশনের ভোটের ফলাফলে গড়ে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়। আর আসনভিত্তিক ফল ঘোষণা হলেও নির্বাচন কমিশন ভোটের হার ঘোষণা করে কয়েক দিন পর।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১৮২ জন। আহত হন পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। ওদিকে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে জানায়, ২৫শে নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সহিংসতায় ১৪৯ জন নিহত এবং ৪৮৮৬ জন আহত হন। এসময় ৫৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বলেও তথ্য প্রকাশ হয়। সূত্র— মানবজমিন/জানুয়ারি ৪, ২০১৫।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভোটের দিন বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের প্রকাশ্যে সিল মারার খবর গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমনকি প্রিসাইডিং অফিসাররাও এমন কাজ করেছেন। অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটারশূন্য থাকায় সকালের দিকে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসারদের ঘুমানোর দৃশ্য দেখা গেলেও দুপুরের পর ব্যালট বাক্স ভরে যাওয়ার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেয় এই নির্বাচন।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলে আসছেন, দশম সংসদের এ সরকারকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তারা (সরকার) দ্বারে দ্বারে ঘুরেও জানুয়ারি ৫-এর নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষের ভোট পায়নি।
তিনি আরো বলেন, একদলীয় নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্জন করেছেন, ঘৃণাভরে প্রহসনের ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন।