প্রার্থীদের আস্থার জন্য যা যা করা দরকার করব: নির্বাচন কমিশনার
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে বিএনপি শঙ্কা প্রকাশ করলেও একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এই নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতিত্ব হবে না, সব প্রার্থীর আস্থা ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো করা হবে।
এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নয়টি দলের অংশগ্রহণ নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘স্বস্তিদায়ক হয়েছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে আপত্তির পাশাপাশি প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। ‘গণতান্ত্রিক দল’ হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। তারপরেও সুষ্ঠু ভোটের জন্য নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন তারা।
তাদের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম শনিবার বলেছেন, ইভিএমে আস্থা ও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি- এ দুটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তারা। ইভিএম দেখার পথ উন্মুক্ত রয়েছে, কমিশনে এসে তা দেখলে শঙ্কা দূর হবে। এছাড়া প্রার্থীদের অযথা হয়রানি বন্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো দলের জন্য নয়, সবার জন্য ‘সমান সুযোগ তৈরি নিশ্চিত’ করা হবে।
আচরণবিধি প্রতিপালন ও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামআগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই ভোট সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নয় দলের ১৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন সহ্রসাধিক। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার করে ১০ জানুয়ারি প্রতীক পেয়েই ভোটের প্রচারে নামতে পারবে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তারের পর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া শুরু করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। শনিবার ঢাকা উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে একই দলের ইশরাক হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আচরণ বিধি লংঘন এবং দলীয় কাউন্সিলরদের হুমধি-ধমকি ও ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ জানিয়ে এর সুরাহা চেয়েছেন তারা।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযোগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের থেকেও আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাহী হাকিমদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধির সঠিক প্রতিপালন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ওপর আস্থা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলগুলো সিটি ভোটে অংশ নিয়েছে, এটা অবশ্যই একটা ভালো দিক। সন্তোষজনক বিষয়। আমরা সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। যে কোনো ধরনের অভিযোগ আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” “
বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো বিশেষ দলের প্রতি কোনো ছাড় থাকবে না, কারও জন্য পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
“যারাই প্রার্থী তাদের আস্থায় রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করব। গ্রেপ্তার বা হয়রানি বন্ধে আমাদের তৎপরতা থাকবে, পদক্ষেপ নেব।”
তবে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “কারও বিরুদ্ধে পারোয়ানা থাকলে, এ নিয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকলে তো কমিশনের কিছু করারও থাকবে না।”
ইভিএমে আপত্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ নিয়ে আমার দরজা খোলা। একজন কমিশনার ইতোমধ্যে তাদের আমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছে। কমিশনে এসে দেখে যেতে পারে। আশা করি, ইভিএমের সার্বিক বিষয় দেখার পর কোনো শঙ্কা থাকবে না।”
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তাকে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ হিসেবে দেখতে চান এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “আমাদের নিয়ে দলগুলো কে কী বলল, সেটা তাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা।”
ঢাকা মহানগরীতে ৫৫ লাখের মতো ভোটারের একসঙ্গে ইভিএমে ভোটগ্রহণ ‘চ্যালেঞ্জ’ হলেও তা ভালোভাবে শেষ করতে আশাবাদী রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা সংসদ নির্বাচন করেছি ইভিএমে, উপ-নির্বাচন করেছি। এখন ঢাকা মহানগরে বড় পরিসরে হচ্ছে। প্রতিটি কাজই চ্যালেঞ্জের। এখানে আমাদের অতিরিক্ত জনবল লাগবে, দক্ষ লোকবল লাগবে। যথাসময়ে সবই প্রস্তুত থাকবে। ভালোভাবে নির্বাচন করতে পারব আমরা।”
তিনি বলেন, “প্রার্থীদের নির্বিঘ্ন প্রচার ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আমাদের প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ রয়েছে।। আচরণ বিধি প্রতিপালনে ইসি কঠোর থাকবে। ইভিএম নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ভোটার এডুকেশন প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে।”
এবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশন থেকে বড় পরিসরে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এবার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র করা হচ্ছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন করে শিক্ষককে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আগামী ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি সব কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন ও ভোট দেওয়ার নিয়ম জানিয়ে প্রচারণা চালানো হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারি ‘মক ভোটিং’ অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের কারিগরি টিম রাখা হবে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, নির্বাহী হাকিমরা মাঠে রয়েছেন। তবে তারা আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা ‘খুব একটা পাচ্ছেন না’। প্রতিদিনই তাদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দিচ্ছেন।
তবে ১০ জানুয়ারির পর থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন তারা।
নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।