শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের দুর্বলতার কথা স্বীকার করলেন বাইডেন

0

গণতন্ত্র বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন উদ্বোধন করার সময় দেয়া বক্তব্যে নিজ দেশের গণতন্ত্রের দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজ এবং প্রাইভেট সেক্টরের লোকজন অংশ নিচ্ছেন। গণতন্ত্রিক নবায়নের জন্যে ইতিবাচক কর্মসূচী হাতে নেয়া এবং যে সকল স্থানে গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে সেগুলো মোকাবেলার জন্যে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া এই সম্মেলনের লক্ষ্য।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “টেকসই এবং উদ্বেগজনক বাধা বিপত্তির সামনে গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও সেরাদের প্রয়োজন”। তিনি আরও বলেন, “আমি এই শীর্ষ সম্মেলন করতে চেয়েছি এই কারণে যে আমরা সকলেই জানি যে যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নবায়ন করার অব্যাহত প্রয়াস প্রয়োজন”।

বিশ্বব্যাপী যখন স্বৈরশাসনের ক্রমবর্ধমান অবস্থা সেই সময়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন বাইডেনের বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র শক্তিশালীকরন প্রচারণার অংশ। সম্মেলন চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। শারীরিক উপস্থিতিতে এক বছরের মধ্যে একটি সম্মেলন করার পরিকল্পনা করা হলেও প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ভিওএকে বলেন বাইডেন প্রশাসনের বাইরে সম্মেলন চলবে বলে মনে হচ্ছে না।

সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র শক্তিশালী করা, কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, দুর্নীতি রোধ করা এবং মানবাধিকার উন্নত করা।

এটা পরিষ্কার নয় কতজন নেতার প্রতিশ্রুতি সত্যিকারভাবে কাজে লাগবে। তাঁদের দেয়া প্রতিশ্রুতি আইনিভাবে অবশ্য করনীয় না হলেও দেশগুলোর মানুষের সমর্থন এবং জনবল লাগবে।

উদার গণতন্ত্র, দুর্বল গণতন্ত্র এবং এমনকি কিছু কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের সরকারসহ একশোরও বেশী দেশকে এই সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ফ্রীডম হাউজেস ডেমোক্রেসির মতে ৭৭ আমন্ত্রিত দেশ মুক্ত বা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক, ৩১টি আংশিকভাবে মুক্ত এবং তিনটি দেশ মুক্ত নয়।

কার্নেগী এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো ষ্টিভেন ফেল্ডস্টাইন বলেন, “বাইডেন প্রশাসন কিভাবে এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি পরিকল্পনা করেছে তার একটি বড়ো পরিসর আছে”। তিনি আরও বলেন আমন্ত্রিতদের মধ্যে তিনটি দেশ ইরাক, অ্যাঙ্গোলা এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দা কঙ্গো মুক্ত গণতন্ত্রের দেশ নয়”।

অতিথি তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ প্রশ্ন উঠেছে কিছু দেশকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, কিছু দেশকে কেন আমন্ত্রণ করা হয়নি। ফ্রিডম হাউজ ইডেনক্সের ৫৩ নম্বর পাওয়া বসনিয়া-হারজেগভিনাকে আমন্ত্রণ দেয়া হয়নি, কসভো ফ্রিডম হাউজ ইনডেক্সে ৫৪ পাওয়া দেশ হলেও আমন্ত্রিত। নয়টি বলকান দেশের পাশাপাশি তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্কোর ৩৭, তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, শ্রীলংকা ৫৬, আমন্ত্রিত নয়।

হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন আমন্ত্রণ মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দিয়ে দিলো।

বিশ্লেষক গোডার্ড বলেন সম্মেলনটি যদিও বিশ্বকে রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর বিষয় নয়, তবে বিভিন্ন স্থানে রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে সমর্থন পাওয়ার এটি বাইডেনের জন্যে একটি সুযোগ।

ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিষ্টান্ট-এর নভেম্বরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে এই প্রথমবার ‘গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ’ আখ্যা দেয়া হল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপেও অ্যামেরিকান গণতন্ত্রের নেতিবাচক অবস্থার ইঙ্গিত উঠে আসে। কেনেডি স্কুলের ইন্সটিটিউট অব পলিসির জরিপে দেখা যায় ৫২ শতাংশ তরুণ অ্যামেরিকান মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হয় সংকটে অথবা ব্যর্থ। মাত্র ৭ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের অবস্থা ভালো।

 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com