ইরান বর্তমানে অপরপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করছে

0

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে পাঁচ দেশের সাথে চলমান আলোচনায় চুক্তি পুনর্বহালে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ইরান।

বৃহস্পতিবার চতুর্থদিনের মতো আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য জানান ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ও পরমাণু সমঝোতায় প্রধান আলোচক আলী বাকেরি কানি।

আলী বাকেরি কানি বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে দুইটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছি… অবশ্যই তাদের উচিত হবে আমরা যা উত্থাপন করেছি তা নিরীক্ষণ করা। তারা যদি আলোচনা অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত হয়, তবে আমরাও ভিয়েনায় আলোচনা চালিয়ে যাবো।’

তিনি বলেন, ইরান বর্তমানে অপরপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করছে।

আলী বাকেরি কানি আশা প্রকাশ করে বলেন, অপরপক্ষও স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি উপসংহারে পৌছাতে সক্ষম হবে।

এদিকে ভিয়েনায় আলোচনায় অংশ নেয়া এক ইউরোপীয় কূটনীতিক ইরানের খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ভিয়েনা থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি আলী হাশেম জানান, এই প্রস্তাব আলোচনার ‘নিরেট’ অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ইরানি কূটনীতিক সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি প্রস্তাবের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বের হওয়ার আগে ইরান যে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিলো তাতে আবার ফিরে আসার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় জানান, বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল ‘নাগালের’ মধ্যেই রয়েছে কিন্তু তা পাশ্চাত্যের ‘কল্যাণকামীতার’ ওপর নির্ভর করছে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলোচনার বিষয়ে প্রতিনিয়ত তার পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আলী বাকেরি কানির সাথে যোগাযোগ হচ্ছে।

আলোচনায় ইরানের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয় দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বলে জানান তিনি।

টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘পাশ্চত্যের শুভ ইচ্ছা প্রদর্শনের ওপরই উত্তম চুক্তিতে পৌঁছা নির্ভর করছে। আমরা যুক্তিসঙ্গত, সংযত ও ফলাফলভিত্তিক সংলাপ চাই।’

এদিকে ইরানের সাথে চুক্তি পুনর্বহালের আলোচনায় বিরোধিতা করে আসছে ইসরাইল।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতের দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেনের সাথে ফোনালাপে বেনেত চুক্তি পুনর্বহালের বিরোধিতা করেছেন।

ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘আলোচনার কৌশলের আড়ালে ইরান পরমাণু হুমকি তৈরিতে কাজ করছে। আলোচনা অবিলম্বে বন্ধ করাই এর উত্তর হওয়া উচিত এবং বিশ্বশক্তির কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করা উচিত।’

ইসরাইলের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েনায় ইরানের প্রধান আলোচক ‘বাইরের শক্তির’ আলোচনাকে নস্যাৎ করার বিষয়ে সতর্কতা জানিয়েছেন।

সাংবাদিকদের আলী বাকেরি কানি বলেন, ‘পি৪+১ পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় আমি সতর্ক করে বলছি আলোচনার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী বাইরের শক্তিকে বাধা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’

গত সোমবার পাঁচ মাস বিরতির পর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি বহালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি আলোচনা শুরু করে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইরানের সাথে বিশ্বশক্তির পরমাণু সমঝোতায় শুরু হওয়া আলোচনা ছয় দফা বৈঠকের পর জুনে ইরানে নির্বাচনের কারণে স্থগিত করা হয়।

পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছে।

১৯৭০ এর দশকে রাজতান্ত্রিক শাসনে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রথম পরমাণু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রকল্প থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালেও ইরান প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি ইরানের পরমাণু প্রকল্পের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টার জন্য দেশটিকে অভিযুক্ত করে আসছিলো। ইরানকে ‘পরমাণু অস্ত্র অর্জনে বাধা দিতে’ দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো।

ইরান সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তেহরানের দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ।

ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতায় বিভিন্ন সময়ই বিশ্বশক্তির আলোচনা হয়।

২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভিয়েনায় ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা সংক্ষেপে জেসিপিওএ নামে পরিচিত এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এর বিনিময়ে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়।

তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সীমিত পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে।

বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তিনি জানিয়েছেন, ইরানকে আগে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে। অপরদিকে ইরান আগে দেশটির ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় নতুন করে শুরু হওয়া পরমাণু আলোচনায় তেহরান ওয়াশিংটনের কোনো প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে অস্বীকার করেছে।

সূত্র : আলজাজিরা, প্রেসটিভি ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com