রাস্তায় পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা: ‘মিলে বেতন নেই, তাই ঘরে খাবার নেই’

0

 বাবার মুখে হাসি ফেরাতে রাস্তায় নেমেছে নরসিংদী ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকদের সন্তানরা। দাবি আদায়ে স্কুল ড্রেস পরে আন্দোলনে যোগ দেন শত শত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তাদের বৃদ্ধা মা-বাবাও। মঞ্চস্থলে এসে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন শিশু শিক্ষার্থীরা। কাঁদিয়েছেন শ্রমিক বাবা ও উপস্থিত সবাইকে। বাবা ও সন্তানদের কান্না আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুরা প্রশ্ন তোলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শ্রমিকরা কেন রাস্তায়? এরই মধ্যে ৫ম দিনে গড়ালো নরসিংদীর জুটমিল শ্রমিকদের আমরণ অনশন। অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নতুন করে আরো ৪ শ্রমিক। 

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শ্রমিকরা। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা ১৪ ডিসেম্বর আন্দোলন স্থগিত করেন। দাবি পূরণে শ্রমিকরা গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় পুনরায় তারা আন্দোলনে নামেন। তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাতভর অনশন স্থলে অবস্থান করছেন শ্রমিকরা। অনশনে অংশ নিয়ে ৫ দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এদের মধ্যে তিন জন শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নতুন করে আলমঙ্গীর, মনির হোসেন, মনির মিয়াসহ আরো ৪ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে আমরণ অনশন মঞ্চের সামনেই স্যালাইন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বেলা ১১টার দিকে ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকদের স্কুল পড়ুয়া শত শত কোমল শিশু শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্লে কার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে মিলের প্রধান গেইটের সামনে আমরণ অনশন মঞ্চে যোগ দেয়। এ সময় শ্রমিক বাবাদের কষ্ট ও মুখের হাসি ফেরাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

ইউএমসি জুট মিলের এব শ্রমিকের সন্তান নবম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা বলেন, আমরা শ্রমিকদের সন্তান। এটা কি আমাদের অপরাধ। আমার বাবার মুখে হাসি নেই। ঘরে খাবার নেই। শ্রমিকের সন্তান হয়েছি বলে কি অন্যায় করেছি। এটাতো উচিত না। এখানে আমাদের আসার কথা ছিল না। আমরা স্কুলে থাকতাম। বাবার কষ্ট সইতে না পেরে আমরা আন্দোলনে চলে এসেছি। আমরা চাই, সরকার মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন করুক।

অপর ছাত্রী ইভা বলেন, আমার বাবা এই মিলে কাজ করে। আমরা কেন খেতে পাই না? মিলে বেতন নেই। তাই ঘরে খাবার নেই। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেলেও কিছু খেতে পাই না। স্কুল পরীক্ষায় পাশ করেছি। বাবা-মায়ের খুশি থাকার কথা। কিন্তু তারা কাঁদে। বই খাতা কিনে দিতে পারে না। চাইলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে। আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা কাজ করে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। সন্তানদের মুখে দু-মুঠো অন্ন ও লেখাপড়া করাতে চাই। আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে দেশের হাজার হাজার শ্রমিকদের সাথে তাদের পরিবারও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এবার আমরা কাফনের কাপড় গায়ে মাঠে নেমেছি। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো।

ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক নেতা ইসা হাবিব রিপন সরকার বলেন, বার বার আশ্বাস দিয়েও আমাদের দাবী মানা হচ্ছে না। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। তারা শ্রমিকদের কথা একবারও ভাবছে না। আমরা হাজার হাজার শ্রমিক ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন করছি সেদিকে তাদের নজরই নেই। আমরা অনতিবিলম্বে আমাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ইউএমসি জুট মিলের সিবিএর সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর ডাকে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছি। আমরা গেলেও আন্দোলন চলছে। কিন্তু মন্ত্রীকে আর সময় দিতে পারবো না। আমাদের মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি লিখিত আকারে ঘোষণা দিলেই আমরা আন্দোলন থেকে ফিরে যাবো। নয়তো, প্রয়োজনে আত্মাহুতি দেবো।

অন্যদিকে, শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে উদ্যোগ নেবে সরকার এমনই প্রত্যাশা ইউনাইটেড-মেঘনা-চাঁদপুর (ইউএম সি ) জুট মিলের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com