গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানা‌ল ড্যাব

0

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থগত অবস্থা জানাল ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব)।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ড্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ড্যাবের মহাসচিব ডা মো. আব্দুস সালাম।

মেডিকেল বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা উল্লেখ ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বহুদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি গত ১২নভেম্বর দুর্বল অনুভব করলে তাকে পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে লিভারের সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়েই ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। ওইদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে খুবই রক্ত বমি হয়। বুঝা যায় যে তার খাদ্যনালীতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে দ্রুত রক্ত ও প্লাজমা ফ্লুইড দেয়া হয়।

তি‌নি আরও ব‌লেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দ্রুত এন্ডোসকপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ৬ (ছয়) টি জায়গায় Band Ligation এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই মুহুর্তে তিনি Shock এ চলে গিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সেই যাত্রায় জীবন রক্ষা পায়। বেগম খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও হার্ট ফেইলিউরের রোগী। উনার হার্ট ফেইলিউর এমন পর্যায়ে থাকে যে কোনো ডিকম্পেসেশন হলে হার্ট ফেইলিউর হয়। তবুও দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার ফলে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়।

‘এরপর নতুন ঔষধ দিয়ে তাকে তিনদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ১৭ নভেম্বর পর আবারো তার রক্তক্ষরণ হলে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা হয়। কারণ প্রথমবার ১৩ নভেম্বর হিমোগ্লোমিন ৫.৪ এ নেমে গিয়েছিলো। ৪ ব্যাগ রক্ত দিয়ে ৯ পর্যন্ত উঠেছিল। আবার সেটা ৭ এ নেমে আসে। এরপরই জীবন রক্ষার্থে অবিরত আইভি ইনফিউশন দেয়া হয়। ব্লাডও দিতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। এভাবে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়। ২১ নভেম্বর থেকে আবারো তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতি হতে থাকে, ২৩ নভেম্বর ব্যাপক অবনতি হয়। তার Haematemesis and melena হয়, ব্লাড প্রেশার ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়, পুরো Colon জমাট বাধা রক্তে পূর্ণ হয়ে যায়।’

‘২৪ নভেম্বর রাতে তাকে আবার জেনারেল ওটিতে নেয়া হয়- যাতে সিরিয়াস কিছু হলে তাৎক্ষনিক কিছু ব্যবস্থা নেয়া যায়। ওইদিন অধ্যাপক ডা. মহসিন ও অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন এর মাধ্যমে তার Endoscopy and Colonoscopy করা হয়। এ সকল প্রক্রিয়া অবলম্বন করার ফলে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। তবে এসকল রোগীর পূণ:রক্তক্ষরণ খুবই স্বাভাবিক (প্রথম সপ্তাহে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ৬ সপ্তাহের মধ্যে যা শতকরা ৭০ ভাগ)। পরবর্তীতে পূণ: রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।’

‘কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে (Band Ligation), এছাড়া যে সমস্ত আধুনিক পদ্ধতি যেমন TIPS প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোন দেশেও নেই। এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানীর সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে।’

ডা মো. আব্দুস সালাম ব‌লেন, যত দ্রুতসম্ভব তাকে উল্লেখিত দেশের উন্নত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা পরবর্তীতে স্থানান্তর করাও মুশকিল হয়ে যাবে।

তি‌নি আরও ব‌লেন, ড্যাবসহ বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অংগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকার কোন কর্ণপাত করেনি। এমনকি পরিবারের লিখিত আবেদনেরও কোন গুরুত্ব দেয়নি। হিংসার বশবর্তী হয়ে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে বারবার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত তিন বছরে সরকারের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে বয়স্কা এই নারী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।

ড্যাবের মহাসচিব ব‌লেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের চিকিৎসকগণের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তি‌নি ব‌লেন,  চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহ্বান জরুরী ভিত্তিতে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহনপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। আমরা আশা করি, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিবেন।

ড্যাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. নিলোফা ইয়াসমিন, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড্যাবের দফতর সম্পাদক ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com