মোদির বিরুদ্ধে মমতা-পিকে

0

রাজনীতিতে কনসালটেন্সি বা একালের ভোটযুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে প্রফেশনাল এক্সপার্ট নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনে পরিকল্পনা করে ভোটে নামা শুরু হয়েছে ভারতে। ভারতের রাজনীতি ষোলোআনাই নির্বাচননির্ভর। তাই ভারতে রাজ্যের বা কেন্দ্রের নির্বাচনের আগেই কেবলমাত্র রাজনীতি করো। বাকি সময় দলের বাতি ধরে রাখলেই হবে। এই হলো ভারতের রাজনীতি। ফলে দলের হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা, লড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে যেহেতু এটা ‘পরিচালনা’ মানে ডিরেকশন বা নির্দেশনা দেয়া; কাজেই ব্যাপারটা আসলে একটা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কাজ যার এক বাংলা করতে পারি পরিচালনা বা ম্যানেজ করা বা সামলানো। কাজেই এটা তো ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট নিয়োগ। তাই না?

বিহারের প্রশান্ত কুমার (পিকে) হচ্ছেন আপাতত ভারতের একমাত্র পলিটিক্যাল কনসালটেন্ট। এটা আসলে জনমত যাচাই, পাবলিক মনোভাব আগাম বুঝা, নির্বাচনে ভোটারদের মুখ্য আশা কী, কী হলে তারা খুবই খুশি হবে, দলের সবচেয়ে খারাপ দিক কোনটা, এর পজিটিভ-নেগেটিভ সব জেনে নেয়া, ইত্যাদি; এসব কাজের জন্য একেবারে স্যাম্পল ডাটা সংগ্রহ করে গবেষণা স্টাডিতে নেমে পড়া; আর সে স্টাডির ফলাফল অনুসারে দলকে পরিচালিত হতে, নড়াচড়া করতে নির্দেশ দেয়া। পিকে এর আগে পেশাদার কনসাল্টেন্ট হিসেবে জাতিসঙ্ঘে এমন স্টাডি গবেষণার কাজ করতেন। এরপর কী খেয়ালে সেসব ছেড়ে এ কাজে নেমে এসেছেন। এ পর্যন্ত কোনো দলের পক্ষে পরামর্শদানের চুক্তি করে সে দলকে হারতে দেননি তিনি। ফলে এটা তার ভালো রেকর্ড। এককালে বিজেপিকেও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। কংগ্রেসকেও। বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকারকেও। এমন অনেক রাজ্যকেই। মমতার সাথে সম্পর্কের শুরু ওই ২০১৯ সালে; সেবারের কেন্দ্রের নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর থেকেই মমতা পিকেকে নিয়োগদান করেছিলেন; যার ফলাফল পরেরবার মমতার ২০২১ নির্বাচনে মোদি হারানোর জয়জয়কার। কিন্তু এরপর থেকেই কেন্দ্রের নির্বাচনে মমতার দলের পক্ষে নেমে পড়া, নতুন চুক্তি হাতে নেন পিকে। আনন্দবাজারের ভাষায় এটা ‘ভোট-কুশলীর কাজ’। শব্দটা ইংরেজি স্ট্রাটেজিস্ট শব্দটার বাংলা কৌশলী আর সেখান থেকে ব্যক্তি কুশলী। এটা কুশল বিনিময়ের কুশল নয়। আসলে, এটা প্রকৌশল লিখতে যে কৌশল শব্দ ব্যবহার করি সেই কৌশল থেকে কৌশলী হবে।

গত মে মাস থেকে কাজে নেমেই পিকে ‘বিরোধী জোটের ঐক্য’ গড়া দিয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। ঘোষণাও করেছিলেন, কংগ্রেসকে সাথে নেয়া ছাড়া এ কাজ শুরু করার মানে নেই; এ ধরনের বক্তব্যও দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিনের মাথাতেই অগ্রগতি না দেখে এবার আবিষ্কার করেন যে, খোদ কংগ্রেস দল ও এর অভ্যন্তরীণ বর্তমান দশাই সব সমস্যার উৎস। আর এরপর থেকেই তিনি প্রকাশ্যেই কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো কী তা বিভিন্ন ঘটনার সময় প্রকাশ্যেই তুলে ধরতে শুরু করেন। ইঙ্গিত দিতে থাকেন কংগ্রেস যোগ্য দল নয়; তাই সে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এর পরই তিনি মমতাকে নেতা হিসেবে ‘প্রজেক্ট’ করা শুরু করে দেন। খুব সম্ভবত তারই পরিকল্পনায় মমতার এবারের দিল্লি সফর।

ঘটনা যতটুকুই যা ঠিক হোক বা না; বাস্তবতা হলো, পিকে-এর কৌশলে মমতাবিরোধী জোট গড়তে এখনো অগ্রসর হতে পারেন আর না পারেন, মমতাই যে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন এই ইমেজ তিনি (পিকে-এর মাধ্যমে) চার দিকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন, সন্দেহ নেই। এরই সোজা মানে হলো, পিকে সঠিকই ধরেছেন, মোদিবিরোধী দল বা কর্মীরা কোন নেতা, কোন পরিকল্পনা, কোন দল ও জোট ইত্যাদি, এমন সবকিছু আছে এটা যে খুঁজে ফিরছে- তা পিকে ধরে ফেলেছেন। ফলে, বিভিন্ন দল ও গ্রুপে তারা যে এখন বের হয়ে আসবে, সাহস করবে, মমতাকে দেখে তারা পথ খুঁজে পেয়েছে মনে করবে তা ফল দেয়া শুরু করেছে। আর এ কাজটা করতেই রাহুল বা সোনিয়ার নেতৃত্বের কংগ্রেস আনফিট, সেটাই সম্ভবত প্রমাণ হতে যাচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com