মহামারী কালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ব্যর্থতা

0

কোভিট১৯ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার খোলনলচে চুড়ান্তভাবে উলঙ্গ করে এর মাথা থেকে তলপেট পর্যন্ত দেখিয়ে দিয়েছে। অথচএই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশের সামনের সারির গণমাধ্যম সমূহ নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে পদ্মা সেতুর স্পান বসানো কিংবা মেট্রো রেলের বগি আমদানির রঙচঙে দৃশ্য দেখাতে।  ভাবখানা এমন বাংলাদেশে পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অথচ তারা বছরখানেক যাবৎ কোভিট১৯ মহামারীকালে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে কি কি অব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং তা দুরীকরণে জরুরী ভিত্তিতে যেসকল ব্যবস্থা নেয়া অবশ্যম্ভাবী তা নিয়ে লাগাতার ভাবে রিপোর্ট ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি।

গণমাধ্যম সমূহ সেই অর্থে প্রকাশ করেনি দেশের জেলা  শহর গুলোতে আইসিউ, অক্সিজেন,ভেটিলেশন, টেস্ট পরিস্থিতির সর্বশেষ পরিস্থিতি সংকট নিরসনে  অগ্রগতি সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রধান ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সহপ্রবীণ সাংবাদিকরা পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে সরকারের  উন্নয়নের প্রশংসা ফোয়ারা ছোটাতে যেভাবে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন তার ভগ্নাংশ মাত্র আইসিউ, অক্সিজেন,ভেটিলেশন সহ স্বাস্থ্য পরিষেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে জনগণের মৌলিক বিষয় সমূহ উপস্থাপন থেকে সুচতুরভাবে নিজেদের এড়িয়ে যাওয়ার শামিল। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টার সহসামনের সারির গণমাধ্যম সমূহ নেতৃত্ব প্রদানকারী সাংবাদিকরা কোভিট১৯ টীকা সংগ্রহে সরকারের অবস্থান, অব্যবস্থাপনা, লুকোচুরি ইত্যাদি বিষয়ে শক্তভাবে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেনি। অথচ জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের প্রতি মনোস্তাত্ত্বিকচাপ সৃষ্টির এটা ছিল গণমাধ্যম সমূহের নৈতিক দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পালনে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টার, চ্যানেল আই, এনটিভি, ৭১ টভি মতো গণমাধ্যম কেন টীকা সংগ্রহে সরকারের নানা কার্যক্রম সম্পর্কে লাগাতার ভাবে ওয়াচডগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি।

গণমাধ্যমসমূহসংবাদপত্র করোনা ভাইরাস ছড়ায় নাএই বিজ্ঞাপন প্রদানে যতটা  স্পেস দিয়েছে তার অনেকাংশে কম প্রশ্ন সরকারের সামনে তুলে ধরেছে টীকা সংগ্রহ, বিতরণ নিয়ে। অথচ এটা গণমাধ্যমের দায়িত্ব ছিলো। কারণ সংবাদ পত্রের কাজইহচ্ছে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লাগাতার ভাবে তুলে ধরে সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা।

প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণে এদেশের মানুষের ভোট ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে এদেশের গণমাধ্যম সমূহ অনেকটা দায়সারা ভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে।  যার চুড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক  শাসনব্যবস্থার অনাআনুষ্ঠানিক যবনিকাপাৎ। মুলত গণমাধ্যম সমূহের নির্লিপ্ততায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীন সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় এর অনেকটা দায় বর্তমান গণবিরোধী সরকারের নীরব  সহযোগী হিসেবে তাদের উপরও বর্তায়!

ঠিক একইভাবে বৈশ্বিক মহামারী কালে স্বাস্থ্য পরিষেবা সেকটরের নানা অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে সংবাদপ্রকাশ না করা (যতটা পদ্মা সেতুর স্পান বসানোর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে) , বিশেষ করে কোভিট১৯ টীকা সংগ্রহ,বিপণন বিতরণ সম্পর্কে অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংবাদ সম্পাদকীয় প্রকাশ না করা হচ্ছে একধরনের নৈতিক ব্যর্থতা। যা কোনো ভাবেই হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নাই। কারণ সংবাদপত্র শিল্পের প্রধান ক্রেতাই হচ্ছে এদেশের সাধারণ নাগরিকবর্গ। আর ক্রেতা স্বার্থরক্ষা সংক্রান্ত মহামারী নিরসন সংশ্লিষ্ট প্রধান সংবাদ টীকা বিষয়ক সংবাদকে সর্বাত্মক অগ্রাধিকার না দেয়া মুলত ক্রেতা অধিকার ক্ষুন্নের শামিল।

যে দোষে দুষ্ট দেশের মূল ধারার গনমাধ্যম।

লেখকঃ মাকসুদুর রহমান

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com