শ্রমিক-মালিকের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দায়িত্ব
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
শ্রমিকের দায়িত্ব হচ্ছে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা তেমনি মালিকের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমিকের ন্যয্য দাবি ও অধিকার দেয়া মালিকের কর্তব্য। শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন–
‘তোমার মজুর (শ্রমিক) হিসেবে উত্তম হবে ওই ব্যক্তি যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২৬)
মালিকের জন্য প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিক নির্বাচন করা। তারপর শ্রমিক নিয়োগের আগে মালিককে অবশ্যই শ্রমিকের সময় (কর্ম ঘণ্টা) ও মজুরি (বিনিময় পারিশ্রমিক) নির্ধারণ করে নেয়া। শ্রমিকের শেষ হওয়ার পর তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া।
শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন উল্লেখিত বিষয় গুলোর যথাযথ ভাবে পালিত হবে। যখন এরব্যতিক্রম ঘটবে তখনই মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক ও দায়িত্বে দ্বন্দ্ব এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। ফলে মালিকের যেমন কাজে বিঘ্ন ঘটবে এবং ক্ষতি হবে; তেমনি শ্রমিকও তার ন্যায্য পাওনা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে শ্রমিক নিয়োগ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন– ‘নিশ্চয় শ্রমিকের মজুরি (কাজের ধরণ ও দায়িত্ব) নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিয়োগ করিও না।’ (মুসলিম)
কুরআন–সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়।ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমিক কাজ যথাযথ পালনের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার পর মালিকের পরবর্তী দায়িত্ব হচ্ছে–
‘শ্রমিককে দেওয়া দায়িত্ব ও কাজ বুঝে নেওয়া এবং পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া।‘
শ্রমিকের কাছ থেকে কাজ বুঝে পেয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া সম্পর্কে মালিকের প্রতি হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। প্রিয় নবিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন–
‘শ্রমিকের (শ্রম দেওয়ার পর) শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে তখনই সুসর্ম্পক প্রকাশ পাবে, যখন শ্রমিক যথাযথ ভাবে মালিকের দেওয়া দায়িত্ব যথাযথ ভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পালন করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করবে। আবার শ্রমিকের কাছ থেকে কাজ বুঝে পেয়ে মালিকও নির্ধারিত পাওনা তথা পারিশ্রমিক যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দেবে আর তখনই শ্রমিক–মালিকের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক দেখাদেবে। সামাজ হবে বিশৃঙ্খলা মুক্ত ও শান্তিময়।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ও মালিকের অধিকার এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক রক্ষায় কুরআন–সুন্নাহ দিক নির্দেশনাই হোক শান্তি প্রতিষ্ঠা ওনিরাপদ সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লেখিত দিক নির্দেমনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।