আইসিসির নজরে বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার
ফিক্সিংয়ের কালোছায়া কোনোভাবেই কাটছে না ক্রিকেটের ওপর থেকে। করোনার মধ্যেও ফিক্সাররা থেমে নেই ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করতে। এবার আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টেন লিগ চলে এসেছে আইসিসির আতশ কাঁচের নিচে। এই লিগকে ঘিরে জমজমাট জুয়ার ব্যবসা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশন আকসু। শুধু তাই নয়, আইসিসির নজরদারিতে রয়েছেন বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটারও।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক সমকাল আজ এ নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যে টি-টেন লিগে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইসিসির নজরদারিতে তিন ক্রিকেটারের বিষয়ে লেখা হয়েছে।
সমকালের সেই রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, ‘টি-টেন লিগের খেলা শুরুর আগেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমিরাতের ক্রিকেটার সানডে সিংকে বায়োসিকিউর বাবল থেকে বের করে দেয় আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (এসিইউ) কর্মকর্তারা।’
কেন? কারণ জানা গেছে লিগের খেলা শেষে। ‘মোট পাঁচজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত (ফিক্সিংয়ের) করছে আকসু। যেখানে তিনজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নামও শোনা যাচ্ছে।’
সেই তিন ক্রিকেটার কে কে? সমকালকে দুবাই থেকে টি-টেন লিগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘পুনে ডেভিলসে খেলা মনির হোসেনের সঙ্গে টুর্নামেন্ট চলাকালেই কথা বলেছেন আকসু কর্মকর্তারা। মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সে খেলা সোহাগ গাজী ও মুক্তার আলীর ওপরও আকসু নজর রেখেছে।’
যদিও সোহাগ গাজীর দাবি, আকসুর কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা হয়নি। আর এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় মুক্তার আলীকে। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় যায়, ফলে মুক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
২০২১ আবুধাবি টি-টেন ক্রিকেট লিগে খেলেছেন বাংলাদেশের সাতজন ক্রিকেটার। প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে আফিফ হোসেন ও শেখ মেহেদীকে দলে নিয়েছিল বেঙ্গল টাইগার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করেই আবুধাবি গিয়েছিলেন তারা। আফিফ পাঁচটি ম্যাচ খেললেও শেখ মেহেদী ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে।
নাসির হোসেন ও মনির হোসেন ছিলেন পুনে ডেভিলসে। মনিরকে প্লেয়ার্স ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে নেয় পুনে। নাসিরের নেতৃত্বে খেলা মনিরকে আকসু জিজ্ঞাসাবাদ করে হোটেলেই। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনির বলেন, ‘শেষ ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গেলে হাতে ব্যথা পেয়েছিলাম। ব্যথা নিয়েই কেন বোলিং করেছি, সেটা জানতে চেয়েছিলেন আকসু কর্মকর্তারা। আমাকে জানানো হয়েছে, যোগাযোগ করা হলে যেন সহযোগিতা করি।’
তবে টি-টেনে খেলা জাতীয় দলের সাবেক এক ক্রিকেটার জানান, ‘মনিরকে একটি ডেলিভারি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করেছিল। এ ছাড়া তার মোবাইলও পরীক্ষা করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছে তার এজেন্টের নামও।’
মারাঠা এরাবিয়ান্সে খেলেছেন মুক্তার আলী, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সোহাগ গাজী। তাদের মধ্যে গাজী প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছিলেন না। এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি দলে নিয়েছে জাতীয় দলের সাবেক এ স্পিনারকে। লিগে সপ্তম হওয়া মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবুধাবির টি-টেনের ওই কর্মকর্তা।
সোহাগ গাজীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাওয়ার আগেই বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কর্মকর্তারা আমাদের ব্রিফ করেছেন। ওখানে যাওয়ার পর থেকেই থাকতে হয়েছে বায়োসিকিউর বাবলে। হোটেলেই থাকতেন আকসু কর্মকর্তারা। বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ ছিল না। আকসু কর্মকর্তারাও কিছু জানতে চাননি। আর খেলা শেষ করে আমরা তিনজন (গাজী, মুক্তার ও মোসাদ্দেক) দুবাইয়ে চলে এসেছিলাম। আকসু প্রয়োজন মনে করলে ডাকতে পারে। কখনও ডাকলে কথা বলতে সমস্যা নেই।’
সমকাল জানিয়েছে, আইসিসির এই তদন্ত সম্পর্কে জানা নেই বিসিবি কর্মকর্তাদের। বিসিবির আকসু প্রধান মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, আইসিসি থেকে এ ধরনের কোনো তথ্য জানানো হয়নি তাদেরকে।
টি-টেন সংশ্নিষ্ট বাংলাদেশের একজন সংগঠক বলেছেন, ‘বিষয়টি আইসিসি তদন্ত করছে। টি-টেনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও পাচ্ছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না। খারাপ লেগেছে বাংলাদেশের দু’জন ক্রিকেটার সোহাগ গাজী ও মুক্তার আলীকে সন্দেহের তালিকায় রাখায়। ওরা তো জাতীয় দলে খেলেছে। প্রার্থনা করি, তারা যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিসির আকসু এক বছর ধরে তদন্ত করে। কেবল সন্দেহের বশে কাউকে তালিকাভুক্ত করে না। কেউ অনিচ্ছাকৃত ভুল করলেও তদন্ত শেষে সতর্ক করে দেয়। আমরা যতটা জেনেছি, আইসিসি ২০২২ সালে একাধিক ক্রিকেটারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
আবুধাবি টি-টেন লিগ আইসিসি অনুমোদিত বিশ্বের প্রথম দশ ওভার ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টের খেলাগুলোকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে আকসু। যে কারণে ২০১৮ সালে ফিক্সিংয়ে জড়িত প্রমাণ পাওয়ায় সিন্ধ দলের অন্যতম মালিক দিপক আগরওয়ালকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
এই দিপক আগারওয়ালই সাকিব আল হাসানকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। করোনার কারণে ২০২০ সালে টি-টেন লিগ পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ বছর ২৮ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আট দলের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নর্দান ওয়ারিয়র্স। ফাইনালে দিল্লি বুলসকে ৮ উইকেটে হারায় তারা।