এমন হারের পর মুমিনুলদের ধুয়ে দিলেন দুই কোচ
টেস্টে বরাবরই পারফরম্যান্স খারাপ। অবস্থানও তলানিতে। দুর্বল জিম্বাবুয়ের সাথে পার পেয়ে গেলেও ইতিহাস জানাচ্ছে, গত বছর এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের মতো নবীশ দলের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। (রোববার) ভাঙাচোরা, এক ঝাঁক নতুন ক্রিকেটারে গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও নাকাল টাইগাররা।
আফগানিস্তানের কাছে হার যেমন, ক্যারিবীয়দের এই দলের কাছে হারটিও অপ্রত্যাশিত। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, ফাস্টবোলার কেমার রোচ-শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ছাড়া আর সবাই প্রায় অখ্যাত ক্রিকেটার।
এই দলেরই কাইল মেয়ারস নামের এক ২৮ বছর বয়সী যুবা তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে হারিয়ে দিলেন মুমিনুলের দলকে। বাংলাদেশের হাতে প্রায় ৪০০ রান (৩৯৫ লক্ষ্য ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের), তারওপর পঞ্চম দিনের পিচ। সব কিছুই ছিল পক্ষে। কিন্তু কিছুই কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ।
অভিষেক হওয়া মেয়ারসের একার প্রতিরোধই ভাঙা সম্ভব হয়নি। কুঁচকির সমস্যায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া সাকিব আল হাসানের অভাবটা ভালোই অনুভূত হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানের বোলিং জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
কেন এই হার? এমন সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও কেন জিততে না পারা? কোথায় হারলো বাংলাদেশ? সবার মনেই এ কৌতুহলী প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ টেস্টের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ারসের প্রশংসা না করে পারবেন না।
একজন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান এ উপমহাদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে এসে স্লো-লো পিচে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেন, প্রায় ৪০০ রানের টার্গেটের পিছু নিয়ে শেষ দিনের পিচে বুক ভরা সাহস আর আস্থায় ব্যাট করে দল জেতানোর সামর্থ্য রাখেন, তা ছিল ভাবনার অতীত। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, সে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মেয়ারস।
তারপরও তার প্রশংসার বিপরীতে বাংলাদেশের হারের নানা কারণও চিহ্নিত হচ্ছে। দেশের ক্রিকেটের দুই সিনিয়র কোচ ও বিশেষজ্ঞ সারোয়ার ইমরান এবং নাজমুল আবেদিন ফাহিম এ টেস্ট পরাজয় নিয়ে জাগো নিউজের সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন।
সারোয়ার ইমরানের মূল কথা হলো- বাংলাদেশ স্পিনারদের দুর্বল, আলগা বোলিংই পরাজয়ের মূল কারণ। সারোয়ার ইমরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, ‘এটা কোনো স্পিন বোলিং হলো? বেশিরভাগ স্পিনার বল টার্ন করানো ও ফ্লাইটে বৈচিত্র্য আনার বদলে অযথা অপ্রয়োজনে জোরে বল করেছে এবং ক্যারিবীয়দেরও পিছনে পায়ের ওপর ভর করে খেলার সুযোগ দিয়েছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘একমাত্র মেহেদি হাসান মিরাজ একটু ফ্লাইট দিয়ে ওপরে ওপরে বল করে ক্যারিবীয়দের সামনে পায়ে টেনে আনার চেষ্টা করেছে। তার পুরস্কার হিসেবে উইকেটও পেয়েছে। বাকিরা সবাই জোরের ওপর বল করে মার খেয়েছে।’
স্পিনারদের দুর্বল বোলিং ছাড়াও ইমরানের ধারণা- ম্যাচ রিডিং, উইকেট সম্পর্কে ধারণাও ছিল ভুল। তাই তার কথা, ‘আমরা ৪৩০ করেই খুশি হয়ে গেছি। পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি। ৪৩০ করলেও ছয়-সাত প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের কারোরই সেঞ্চুরি নেই। আট নম্বরে নেমে মেহেদি হাসান মিরাজ শতরান করে ৪০০-তে নিয়ে গেছে। আমরা ভেবে ফেলেছিলাম, এ পিচে এটাই অনেক রান।’
ইমরান যোগ করেন, ‘আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে আড়াইশোর আশপাশে থামায় আমরা মনে করি, এই দলের পরের ইনিংসেও এর বেশি রান করার ক্ষমতা নেই। সেটাই ছিল বড় ভুল। আসলে আমাদের প্রথম ইনিংসে করা উচিত ছিল ৬০০।’
‘এছাড়া উইকেটের চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রেও আমরা দক্ষতা ও দূরদর্শিতার ছাপ রাখতে পারিনি। ধারণা ছিল এ উইকেটে স্বাগতিক স্পিনারদের বিপক্ষে তৃতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা বেশি রান করতে পারবে না। কিন্তু উইকেট ততটা খারাপ হয়নি। আনইভেন বাউন্স ছিল না। হাতো গোনা কয়েকটি ডেলিভারি ছাড়া উইকেট ঠিকই ছিল।’
প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন আরেক সিনিয়র কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমও। ফাহিমের অনুভব, বাংলাদেশ দলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঘাটতি ছিল। দল জেতানোর চেয়ে কারো কারো মাথায় চতুর্থ দিন শেষেই ব্যক্তিগত সাফল্যের ফলক স্থাপনের চিন্তা ঢুকে গিয়েছিল।
ফাহিম আরও মনে করেন, উইকেটের চরিত্র বোঝা এবং গতিপ্রকৃতি বুঝে ওঠায়ও ছিল ভুল। তিনি বলেন, ‘বোলারদের বোলিং ও বুটের আঘাতে দু দিকে কিছু ক্ষত তৈরি হলেও পিচের মাঝখানে কোনো সমস্যা ছিল না। সাধারণত পঞ্চম দিনে পিচে গুডলেন্থ স্পটেও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পিচ ভেঙে যায়। বল পড়ে বাড়তি টার্ন করে, কোনো কোনো ডেলিভারি আচমকা লাফিয়েও ওঠে। কিন্তু আজ পিচ তেমন ভাঙেনি। বোলাররা বিশেষ করে স্পিনাররা তেমন সাহায্য পায়নি। উইকেটে তেমন টার্ন না থাকলেও চলতো, যদি স্পিনারদের বলে ডিসিপ্লিন থাকতো। তাও ছিল না। প্রচুর বাউন্ডারি হজম করেছে আমাদের বোলাররা।’