পৌরসভা নির্বাচন: ভোট বর্জনের হিড়িক
সারা দেশে একযোগে দ্বিতীয় দফায় ৬০ পৌরসভায় নির্বাচন চলছে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও ভোট কারচুপি এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে বেলা ১১টার পর থেকে একের পর এক ভোট বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলরা।
সকাল ৮ টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার বিএনপি মেয়র প্রার্থীসহ মোট ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া একই অভিযোগে রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নূরুল মিল্লাত ভোট গ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী বলেন, ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি কেন্দ্রে দখল করে নেয় আওয়ামী সমর্থকরা। তারা ভোটারদেরকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে এবং সাধারণ ভোটারদেরকে বাধা দিতে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নূরুল মিল্লাত বলেন, ভোট গ্রহণের কয়েকদিন আগে থেকেই প্রশাসন ও সরকারি দলের লোকজন বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে গিয়ে হুমকি দিয়েছে। অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আজ ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদেরকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। অনেককে মারধরও করা হয়। এ অবস্থায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না।
রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী বলেন, সকালে পৌরসভার চাঁনপাড়া স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। মেয়র প্রার্থী হয়েও ভোট দিতে পারিনি। ৯টি ওয়ার্ডের সবগুলো থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এজন্য ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি।
সিরাজগঞ্জ শহরতলী বা একটু দূরের কেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। পাবনার ঈশ্বররদী পৌর নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়নকে মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। মাগুরা পৌর নির্বাচনে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী ইকবাল আখতার খান কাফুর।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্নস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধার আদর্শ পাড়া এলাকার টেক্সটাইল কেন্দ্রে দুই দলের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর কেন্দ্রে হামলা করে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ মিনিট ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকে।
ফেনীর দাগনভূঞাঁ পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুই আনসার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন দুইজন
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টির মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হচ্ছে। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হচ্ছে।
৬০ পৌরসভাতে মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ৭৪৫ এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে।