পাকিস্তানকে হারাতে পারবে না ভারত

0

সামরিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভারতের কোনো স্পষ্টতা নেই এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও চীন, কাউকেই যুদ্ধে হারানোর ক্ষমতা তাদের নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ড কনভেনশনাল আর্মস রেস : স্পেকটার অব নিউক্লিয়ার ওয়ার’ বইয়ে এই কথা বলেছেন ভারতের সাবেক পুলিশ অফিসার এনসি আস্থানা। তিনি একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়্যার এনসি আস্থানার লেখা বইটির একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। বইটিকে উদ্ধৃত করে তারা বলেছে, ‘সামরিকবাদী কর্মকর্তা এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে বিশাল অমিল রয়েছে। বাস্তবতা হলো ভারত দেশ দুইটির কোনোটিকেই সামরিকভাবে পরাস্ত করতে পারে না।’ পর্যালোচক, জনপ্রিয় কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পোর্টালের সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারদারাজন আস্তানাকে উদ্ধৃত করে বলেন যে, ব্যয়বহুল অস্ত্র আমদানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে ভারতকে পাকিস্তান ও চীনের হুমকি মোকাবেলায় কূটনীতি আলোচনাসহ বেসামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা উচিত। কারণ, দেশ দুইটি প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে শক্তিশালী করে তুলছে।

আস্থানার কলামগুলো স্কলারশিপের জন্য ব্যাপকভাবে পড়া হয়। চাকরিরত অবস্থায় তিনি প্রায় ৪৮টি বই রচনা করেছেন। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচক হিসাবে তার পরিচিতি রয়েছে। ভারদারাজন বলেন, আস্তানা তার বইয়ে ভারতের রাজনীতিকে ‘যুদ্ধ প্ররোচণা’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গত ছয় বছর ধরে ভারতের জনসাধারণ রাজনীতিবিদদের এই সংক্রান্ত বক্তৃতা গ্রাস করেছে। ভারতীয় এমন ভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন যে, ভারত যেন যাদুবলে অদম্য হয়ে উঠেছে। কীভাবে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় যুদ্ধের জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ছে সে বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি আরও হাওয়া পেয়েছে ভারত নিরলসভাবে অস্ত্র আমদানি করে চলায়। ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারত অস্ত্র আমদানিতে যে ব্যয় করেছে তার চিত্র তুলে ধরে আস্থানা বলেছেন, ‘এবং ড্যাসল্ট এভিয়েশন থেকে কেনা ৩৬টি রাফাল জেটের অঘোষিত ব্যয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

তারপরও ভারত আগামী দশকে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানির পরিকল্পনা করেছে। আস্থানা বলেন, ‘প্রথম রাফালেদের আগমনের পর থেকেই গণমাধ্যম এটিকে জনগণের কাছে বড় জয় হিসাবে তুলে ধরেছে যা ভারতের শত্রুদের ধূলোয় মিশিয়ে দেবে। তবে এটি প্রকৃত সত্য থেকে অনেক দূরে।’ আস্তানা যুক্তি তুলে ধরেন যে, প্রচলিত অস্ত্রের উন্মত্ত আমদানি কখনই পাকিস্তান বা চীন দ্বারা সৃষ্ট সামরিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের গ্যারান্টি দিতে পারে না কারণ উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রে বলিয়ান এবং যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারে পরাজিত হতে পারে না।

আস্থানা বিশ্বাস করেন যে, নির্বাচনী সুবিধার জন্য ভারতীয় নেতারা পাকিস্তানের সাথে শত্রুতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। যুদ্ধের ক্ষেত্রে, পাকিস্তান যে মুহূর্তে মনে করবে যে তারা যুদ্ধ হারতে চলেছে, তৎক্ষণাত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হতে হবে। এটি ১৯৭১ নয়। ২০০২ সালে পাকিস্তানের কৌশলগত কমান্ডের প্রধান জেনারেল খালিদ কিদওয়াই ইতালীয় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এক প্রতিনিধিকে দেশের লাল রেখার বিষয়ে কী বলেছিলেন তা মনে করুন।’

ওয়্যার রিভিউয়ে বলা হয়, জেনারেল কিদওয়াইকে বলেছিলেন যে, যদি রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের অস্তিত্বই ঝুঁকিতে থাকে তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। আস্থানা জেনারেল কিদওয়াইয়ের লাল রেখার সংক্ষিপ্তসার এইভাবে জানিয়েছে, ‘পারমাণবিক অস্ত্র কেবলমাত্র ভারতবর্ষের দিকে তাক করা। যদি ডিটারেন্স ব্যর্থ হয় তবে সেগুলি ব্যবহার করা হবে। যদি ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে এবং তার ভূখণ্ডের একটি বৃহত অংশ (স্থানের দ্বারপ্রান্ত) জয় করে নেয়, ভারত তার স্থল বা বিমান বাহিনীর (সামরিক প্রান্তিকতা) এর একটি বড় অংশকে ধ্বংস করে দেয়, ভারত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শ্বাসরোধে এগিয়ে যায়, ভারত পাকিস্তানকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয় বা পাকিস্তানে একটি বৃহত আকারের অভ্যন্তরীণ বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাহলে সেগুলো ভারতের বিপক্ষে ব্যভহার করা হবে।’

সূত্র : ডন

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com