নির্বাচনের ফল সম্পূর্ণ বানোয়াট: বিএনপি

0

রিজভী বলেন, নির্বাচনে যে ফল নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতেই জানা গেছে– ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ওই সব কেন্দ্রের বহু মানুষ বিদেশে রয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন কিংবা অনেকে কেন্দ্রেই যাননি। এ ছাড়া ওই ফলে জানা যায়, ৫৯০টি কেন্দ্রে বৈধ ভোটের শতভাগ কেবল একটি প্রতীকেই পড়েছে। এটিও অবিশ্বাস্য। এসব অবাস্তব ও অস্বাভাবিক ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোনো ব্যাখ্যা নেই। 

তিনি বলেন, এছাড়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা এক হাজার ১৭৭টি (মোট কেন্দ্রের ২.৯৩ শতাংশ) কেন্দ্রে, লাঙল প্রতীক তিন হাজার ৩৮৮টি (মোট কেন্দ্রের ৮.৪৪ শতাংশ) কেন্দ্রে, হাতপাখা প্রতীক দুই হাজার ৯৩৩টি (মোট কেন্দ্রের ৭.৩০ শতাংশ) কেন্দ্রে কোনো ভোটই পাননি, এটিও কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ফলের এমন অস্বাভাবিকতা নির্বাচন কমিশনের গুরুতর অসদাচরণেরই প্রতিফলন। নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারি দলের বক্তব্য যখন এক হয়ে যায়, তখন সেই নির্বাচন কমিশন যে সরকারের গোলাম হয়েই কাজ করছে তাও প্রমাণিত হয়েছে।

রিজভী বলেন,  আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর ‘ভোটডাকাতি’ হয়েছে। তাই ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে দেশবাসী ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাতে র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় ব্যালটবাক্স পূর্ণ করে ক্ষমতা দখলের দুই বছর পূর্ণ হবে আজ মঙ্গলবার রাতে।  তাই ওই রাতটি দেশবাসীর কাছে তাদের ভোটাধিকার হরণের কালো রাত হিসেবে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। 

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কালো রাতে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। সেদিন গণতন্ত্রের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়েছিল। তাই ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি, যা হয়েছে তা হলো– নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সম্মিলিত উদ্যোগে ভোটডাকাতি। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে ভোটডাকাতির নির্বাচনের খবর ফলাও করে প্রচার হয়েছে। আসলে ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেররা যা করেছেন তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘ডার্টি ওয়ার’।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এই অভিনব ও নজিরবিহীন নিশিরাতের নির্বাচন করে অনুশোচনার বালাই নেই; বরং গত পরশু দিন ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি তখন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত করতে এবং গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলতে চেয়েছিল’। আদিম মানুষেরা নরবলি দেয়ার পর মৃতদেহ নিয়ে যেভাবে উল্লাস করত, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য যেন গণতন্ত্র হত্যা করে সেই ধরনের উল্লাসেরই বহিঃপ্রকাশ। গণতন্ত্র হত্যা করে গণতন্ত্রের প্রতি এহেন শ্রদ্ধাহীন স্পর্ধার সংস্কৃতিতে দেশবাসী আজ চরমভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। এই নির্বাচনের পর নব্য নাৎসিরা দাঁত বের করেছে হিংস্রভাবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অথচ সিইসি নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন সেই কমিশনের অধীনে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। মানুষের ভোটের অধিকারকে এই কমিশন শুধু হরণই করেনি বরং মহান স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তারা গুরুতর অসদাচরণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দয় মনোবৃত্তির সারাংশ মাত্র। দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করে ইসির ভোটডাকাতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির যে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং তাদের বিচার দাবি করেছেন– এ দাবি দেশের ১৬ কোটি মানুষের।

৩০ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিক্ষোভ: রিজভী জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল ও পুর্নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে একই দিন দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com