নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে ভোক্তারা দিশেহারা

0

করোনার তাণ্ডবে দেশের মানুষ যখন অস্থির, এমন অবস্থায় নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বল্পআয়ের মানুষের। তাদের সীমিত আয়ে আকাশছোঁয়া দামে নিত্যপণ্য ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে তাদের। প্রশ্ন হল, যারা সময়মতো ঋণ পাবে না, তাদের কী হবে? স্বল্পআয়ের মানুষের আয়ের বেশিরভাগই খরচ হয় ভোগ্যপণ্য ক্রয় করে। গত কয়েক মাস ধরে চালের বাজারে অস্থিরতার কারণে তাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন রকম চাল মিল পর্যায়েই (৫০ কেজির প্রতি বস্তা) ৫০০ টাকার ওপর বেড়েছে। এ বাড়তি দরে চাল কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে খাদ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা আশা করব, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ানোর সুযোগ পাবে না।

জানা গেছে, বর্তমানে সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়; যা তিন মাস আগে ছিল ২ হাজার ৩শ’ টাকা। মাঝারি মানের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাত প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা; যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা; যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার টাকা। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুরের বাজারে চাল ও ভোজ্যতেলের বাড়তি দাম ভোক্তাদের বিপাকে ফেলেছে। প্রায় ১ মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে ভোজ্যতেল ও চালের দাম বেড়েই চলেছে। বস্তুত এমন পরিস্থিতি সারা দেশেই চলছে। কোনো না কোনো অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে।

পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হলেই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। নিকট-অতীতে দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এ বছর দেশে কয়েক দফা বন্যা হয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারা বছরের উৎপাদন ও চাহিদা তুলনা করলে স্পষ্ট হয়, দেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, আগামী জুন পর্যন্ত দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এ অবস্থায় ধানের ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অভিযোগ রয়েছে, চালের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য কিছু মিলার দায়ী। অসাধু ব্যক্তিরা বিপুল পরিমাণ ধান কিনে মজুদ করে। বস্তুত এভাবেই চালসহ অন্য নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। যারা এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করতে বিলম্ব হলে বারবার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাবে। লক্ষ করা গেছে, দেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না। মহামারী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, তা প্রলম্বিত হবে। এ অবস্থায় ভোক্তারা যাতে বাজার তদারকির সুফল পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় অসাধুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com