জয়-লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

0

পদের আশায় বুড়ো হয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করে ছাত্রলীগে নাম লিখিয়েছেন যেসব নেতাকর্মী পদের আশায় বয়স পেরিয়ে তারা এখন বুড়ো হতে চলেছেন। এতে পদপ্রত্যাশী কর্মীরা পুরোপুরি হতাশ। সংগঠনের জন্য ঘাম, শ্রম, মেধা ও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেও ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কথিত অবহেলায় সামনে এখন হতাশাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ বলে দাবি করছেন পদপ্রত্যাশীরা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগর সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থে অথবা ভিন্ন উদ্দেশ্যে আমাদের নামে অভিযোগ তোলেন। তবে মূল সত্য হলো আমরা অনেক জেলায় কমিটি দিয়ে যাচ্ছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি দেওয়া হচ্ছে না বন্ধ থাকার কারণে। কভিড-১৯-এর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৪৮ পদ শূন্য রয়েছে। যাচাই-বাছাই চলছে। এখানেও কভিড-১৯ আমাদের থামিয়ে দিয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দেশনা পাব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তখন আমরা শূন্য পদ পূরণ ও পদায়ন করব। আপনারা জানেন, আমরা (জয়-লেখক) দায়িত্ব নেওয়ার পরে কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ দিয়েছি। শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করতে গিয়ে আবার বিতর্কিতরা যাতে ঢুকে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর থাকায় কিছুটা সময় লাগেছ।’ এ প্রসঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও মোবাইল ফোনে সাড়া দেননি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, জয় ও লেখকের অবহেলায় বৃহত্তম এ ছাত্র সংগঠনে পদ না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে অসংখ্য ত্যাগী ও যোগ্য কর্মীদের। একদিকে বয়স চলে যাচ্ছে অন্যদিকে সংগঠন অসংগঠিত এ দুটি কারণে দুই শীর্ষ নেতার প্রতি পদপ্রত্যাশীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। জয়-লেখকের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে এবং কর্মী নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে পারিবারিক অর্থও নষ্ট হয়েছে।

চলতি ডিসেম্বর মাসে জয়-লেখককে শূন্যপদগুলো পূরণ করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন আমরা বলেছি, আপনারা যাকেই নেতা বানান বানিয়ে ফেলেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের ঘোরাঘুরি, অপেক্ষার অবসান ঘটুক। প্রত্যুত্তরে জয়-লেখক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতি নেই, তাই পদায়ন বা শূন্যপদ পূরণ ও সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না।’ তবে শীর্ষ দুই নেতার এ বক্তব্য মানতে নারাজ পদের আশায় ঘোরাঘুরি করা নেতারা।

এছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখকের বিরুদ্ধে পদপ্রত্যাশী নেতাদের অবহেলা করার অভিযোগ উঠেছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা আরও বলেন, শুধু তাই নয় তাদের অভাব-অভিযোগও সংগঠনের দুই নেতার কেউই আমলে নেন না। ফোনেও পাওয়া যায় না তাদের। সবসময়ই নেতাকর্মীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন এই দুই নেতা। ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের নেতারাও পদপ্রত্যাশীদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনছেন না এমন অভিযোগও আছে।

সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবহেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষ্ক্রিয় ছাত্রলীগ। সেই সুযোগে মৌলবাদী চক্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শেকড় গেড়ে বসেছে।

সবার কাছেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ দুই নেতার কেউই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অপর নেতাদের ফোন ধরেন না। সাধারণ কর্মীরাও জয়-লেখককে ফোনে পান না। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের লাখ লাখ কর্মী। সবার ফোন ধরা সম্ভব হয় না।’

অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছে দুই বছর মেয়াদের ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময় পার করে তারা এখন ৬ মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ। এ পর্যন্ত একটি সাধারণ সভাও করতে পারেননি তারা। কোন নেতার দায়িত্ব কী হবে সেটাও বণ্টন করে দিতে পারেননি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কমপক্ষে ৫০টি শূন্যপদ রয়েছে এই পদগুলো পূরণে জয়-লেখকের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। পদপ্রত্যাশী নেতাদের ভাষ্য, সংগঠনের ঢাকার চারটি ইউনিটে সম্মেলন করে যান সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এগুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এগুলোর কোনো ইউনিটেই গত দেড় বছরেও কমিটি দিতে পারেননি তারা। কমিটি দিতে না পারার ব্যর্থতা ও অবহেলায় এ ইউনিটগুলোর পদপ্রত্যাশী সব নেতার ছাত্ররাজনীতি করার বয়স শেষ হওয়ার পথে। তাদের অভিযোগ, ওই ইউনিটগুলোর পদপ্রত্যাশীদের ছাত্ররাজনীতি করার বয়স শেষ হলেই কমিটি দেওয়া হবে সেখানে। তাতে জয়-লেখকের ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ হাসিল হবে।

জয়-লেখকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভারপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে গেলে জেলা সফর শুরু করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কাজ আজও শুরু করতে পারেননি জয়-লেখক। ঢাকায় বসে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। এটি গঠণতন্ত্রবিরোধী বলেও অভিযোগ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের। তিনি বলেন, এভাবে কমিটি হলে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়। ইতিমধ্যে অনেক জেলা-উপজেলা থেকে এমন অভিযোগ এসেছেও।

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের প্রেস রিলিজের কমিটির সমালোচনা করে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল হক শামীম বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় কয়দিন আগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে মৌলবাদী চক্র। সেখানে সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হলে ভাস্কর্যবিরোধী মৌলবাদী চক্রকে কঠোর জবাব দেওয়া সম্ভব হতো।’

জয়-লেখকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছুতোয় বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান। তিনি বলেন, ‘জয়-লেখকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এতই অকার্যকর হয়ে আছে যে এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যেতে পারেনি। বিতর্কিত, বিবাহিত ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে পদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ পদ শূন্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা ডেকে শূন্যপদ পূরণ, পদায়ন করতে একাধিকবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বলা হলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারা সময়ক্ষেপণ করছেন। এটা সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার নিষ্ক্রিয়তায় সংগঠনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। সংগঠনের কার্যক্রমের স্থবিরতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে মৌলবাদী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’ এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন সারা দেশ সফর করে, সম্মেলন করে ইউনিটের কমিটি দেওয়ার। কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি দিয়ে আমাদের অভিভাবক শেখ হাসিনার নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করছেন।’

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সংগঠনে এ অবস্থায় চলছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলা সফর আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনেরই চলছে। শুধু ছাত্রলীগের জন্য করোনার ভয়?’

মাজহারুল ইসলাম শামীম আরও বলেন, ‘সভাপতি জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখকনির্ভর ছাত্রলীগে প্রকৃতপক্ষে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কমিটির মেয়াদ আড়াই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। অথচ নির্বাহী সংসদের দায়িত্ব বণ্টন হয়নি। প্রতি দুই মাস অন্তর সাধারণ সভা হওয়ার বিধান থাকলেও এ পর্যন্ত একটি সভাও আহ্বান করেনি জয়-লেখক।’ জয়-লেখক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগকে অকার্যকর করে রেখেছেন বলে মনে করেন তিনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com