৫ বছরে ২৫ গুণ সম্পদ বেড়েছে পুঠিয়ার মেয়র রবির

0

মাত্র সাড়ে তিন বছর রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভার মেয়রের চেয়ারে রবিউল ইসলাম রবি। পাশাপাশি পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদেও রয়েছেন তিনি। এতেই ভাগ্য বদলে গেছে তার। দুই নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে গত ৫ বছরের তার সম্পদ প্রায় ২৫ গুণ বেড়ে গেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে- মেয়রের আরও বিপুল সহায়-সম্পত্তি থাকলেও তা হলফনামায় এবার দেখানো হয়নি।

হলফনামার তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় রবিউল ইসলাম রবির হাতে ছিল নগদ দেড় লাখ টাকা। এবার তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৩০ লাখ ৯২ হাজার। ৫ বছর আগে তিনি নিজের আয় দেখিয়েছিলেন- কৃষিখাতে বছরে ১৫ হাজার, মৎস্য ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৫৫ হাজার। এখন তার কৃষিখাতে আয় বছরে ২৫ হাজার, মৎস্যখাতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার এবং মেয়র হিসেবে সম্মানি ভাতা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

৫ বছর আগেও ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল ছিল মেয়র রবির। এছাড়া পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ৪ বিঘা ৫ কাঠা জমি এবং তার স্ত্রীর ২০ ভরি গহনা ছিল। কিন্তু এবারের হলফনামায় পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমি বাদেও ৭ স্থানে নিজের নামে ক্রয় করা তিন বিঘা জমি এবং প্লট দেখিয়েছেন মেয়র। তবে ওই জমির মোট ক্রয়মূল্য উল্লেখ করেননি। তবে এ পাঁচ বছরে মেয়র রবির স্ত্রী কোনো নতুন গহনা ক্রয় করেনি। তাই গতবারের মতো ২০ ভরি উল্লেখ করেছেন তিনি।

এবার তার দুই স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নামে অর্থ-সম্পদ বা ব্যাংক হিসেবের কোনো তথ্য বিবরণ হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এছাড়া তিনি পৃথক বাড়ি ও অফিসে একাধিক এসি, গরু-মহিষের খামার ও তার পরিবারের ব্যবহৃত একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির বিবরণও উল্লেখ করেননি।

গরু-মহিষের খামার এবং দুটি বাড়িতে কাজের লোকজনের পৌরসভার দৈনিক হাজিরার কর্মচারি দেখিয়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের বেতন তোলারও অভিযোগ রয়েছে মেয়রের বিরুদ্ধে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়র রবি সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই সম্পর্কের জেরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন তিনি। গত মেয়াদে বাগিয়ে নেন দলীয় মনোনয়নও। সেই নির্বাচনে হেরে যান রবি। তাতে বিএনপির প্রার্থী আসাদুল হক আসাদ জয় লাভ করেন। এরপর পুনরায় ভোট গণনার আবেদন করেন রবি। প্রায় দেড় বছরের মাথায় পুনরায় ভোট গণনার পর রবিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

jagonews24

এলাকাবাসী বলছেন, মেয়রের চেয়ারে বসার বছর না ঘুরতেই আধাপাকা পুরনো বাড়ি ভেঙে আলিশান বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেন রবি। স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষিকাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য পুঠিয়া খাদ্যগুদাম গেইটের সামনে আলাদা প্লট কিনে সেখানেও বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এখনও বাড়িটি নির্মাণাধীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই স্ত্রী ও সন্তানদের পাশাপশি আপন ভাই-ভাতিজাদের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ রয়েছে রবির। তাদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারসহ একাধিক মাইক্রোবাস।

পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রবি মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর উন্নয়নের নামে লুটপাট শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে পৌরসভার দু’জন কর্মচারি ও একাধিক কাউন্সিলরের হাত করে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে। পৌরভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিজেস্ব ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পৌরসভার সব ধরণের উন্নয়নকাজে ১০ শতাংশ কমিশন নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে মেয়র রবির বিরুদ্ধে। পৌরসভার দুটি প্যাকেজের রাস্তা করার জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার কাজের বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন মেয়র।

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভার দুটি প্যাকেজের রাস্তা করার জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার টেন্ডার হয়। এই কাজের অগ্রিম বিল বাবদ এক কোটি টাকা পৌরসভার নিজস্ব হিসাব নম্বরে গত ১৬ এপ্রিল জমা হয়। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোলাপ কনস্ট্রাকশনকে ২০ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংক পুঠিয়া শাখার পৌরসভার হিসাব নম্বর থেকে চেকের মাধ্যমে ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই দিন অগ্রণী ব্যাংকের একই শাখায় মেয়র রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে ৩০ লাখ টাকা জমা করা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল ঠিকাদার গোলাপকে দুটি চেকে সাড়ে সাত লাখ ও চার লাখ এবং ৩১ মে অন্য ব্যাংক বা শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে শেষ করা হয় নগর উন্নয়ন প্রকল্পের এক কোটি টাকা।

মেয়র রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘আমার ব্যাংক হিসাবে ৩০ লাখ টাকা টেন্ডারের কাজের কমিশন নয়। আমি কোনো কমিশন নেন না। এটা ছিল গরু-মহিষ বিক্রির টাকা।’

নিজের বিপুল সম্পদের ব্যাপারে মেয়র রবি বলেন, ‘আমি ব্যবসা করে এ সম্পদ গড়ে তুলেছি। আমার সব সম্পত্তির রাজস্ব দিয়ে থাকি। আমার সব সম্পদের হিসেবও নির্বাচন অফিসে দেয়া আছে। হলফনামায় কী কী বিবরণ দেয়া আছে তা আমার মনে নেই।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com