ভারতে মোদি শাসনে ব্যক্তি স্বাধীনতা বিপন্ন

0

নরেন্দ্র মোদি আমলে ভারতে ব্যক্তি স্বাধীনতা বিপন্ন। ভারতের কোনো বিরোধী দলের অভিযোগ নয়, মার্কিন সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টেই এই তথ্য সামনে এসেছে। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে।

‘আচ্ছে দিন’-এর স্লোগানে বিপুল ভোটের মালিকানার অধিকারী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। পরপর দু’বার। তারপরও বিভিন্ন সূচকের নিরিখে ভারত ক্রমাগত ধাক্কাই খেয়ে গেছে। ক্ষুধা, বেকারত্ব, মানবাধিকার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক ধাপ নেমে গেছে বিজেপির শাসনাধীন ভারত। আর এই পরিসংখ্যান পুরোটাই আন্তর্জাতিক। সম্প্রতি সেই দুর্নামে সংযোজিত হয়েছে ব্যক্তি স্বাধীনতা সূচক। মার্কিন মুলুকের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যাটো ইনস্টিটিউটের সদ্য প্রকাশিত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট মোদি জমানার এই বিপন্নতার ছবি সামনে এনেছে।

বিশ্বের ১৬২টি দেশের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা সূচকের নিরিখে গতবারের তুলনায় এবার ১৭ ধাপ নেমে গিয়ে ১১১তম স্থান জুটেছে ভারতের। শুধু তাই নয়, ভারতের নাগরিকদের ব্যক্তি এবং আর্থিক স্বাধীনতা এমনই বেহাল যে এ ব্যাপারে গড় নম্বরের মাপকাঠি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি ভারত। মোট ১০ নম্বরের এই সমীক্ষায় ১৬২টি দেশের গড় নম্বর হয়েছে ৬.৯৩। ভারত সেখানে পেয়েছে ৬.৪৩। ব্যক্তি স্বাধীনতা সূচকের এই সমীক্ষায় নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, এস্তোনিয়া, জার্মানি ও সুইডেন রয়েছে প্রথম ১০-এ।

আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থিত ক্যাটো ইনস্টিটিউট বহু বছর ধরেই নানা বিষয়ে বিভিন্ন দেশের উপর সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। তাদের সমীক্ষা রিপোর্টকে শুধু সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারই নয়, জাতিসঙ্ঘও সমান গুরুত্ব দেয়। সেই নিরিখে ব্যক্তি স্বাধীনতা সূচক (হিউম্যান ফ্রিডম ইনডেক্স)-এর এই রিপোর্ট কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে। এই রিপোর্টের নেপথ্যে বিশেষ করে রয়েছে গত কয়েক বছরে মোদি সরকার তথা শাসক বিজেপির নানা পদক্ষেপ। যা বারবার ভারতবাসীর ব্যক্তি ও আর্থিক স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সাধারণের স্বার্থবিরোধী এই নীতিই বিরোধীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন সমীক্ষা রিপোর্টের বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের। গায়ের জোরে চাপানো নাগরিকত্ব বা কৃষি আইনের প্রতিবাদকারীদের দুর্দশার ছবিটা আরো প্রকট হয়েছে গোটা বিশ্বের সামনে।

মার্কিন এই সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যক্তি স্বাধীনতা সূচকে ভারত প্রতিবেশী চীন (১২৯), পাকিস্তান (১৪০) এবং বাংলাদেশ (১৩৯)-এর থেকে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু ভুটান (১০৮), শ্রীলঙ্কা (৯৪) এবং নেপাল (৯২)-এর মতো ছোট প্রতিবেশীরাও টপকে গিয়েছে মোদির শাসনাধীন ভারতকে। ব্যক্তি স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারত নম্বর পেয়েছে ১০-এর মধ্যে ৬.৩। পাশাপাশি আর্থিক স্বাধীনতার নিরিখে ভারতের ঝুলিতে এসেছে ৬.৫৬ নম্বর।

ক্যাটো ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ৭৬টি বিষয়ের উপর তথ্য যাচাই করা হয়েছে এই সমীক্ষায়। এর মধ্যে আইনের শাসন, ধর্মীয় ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, সম্পত্তির অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে চালু হওয়া এই সমীক্ষার পর গড় সূচকের তেমন কোনো হেরফের হয়নি গোটা বিশ্বে। বিগত প্রায় এক দশকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ৭০টি দেশ তাদের স্থান ক্রমশ উপরে নিয়ে গিয়েছে। একইভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারায় ৭০টি দেশের স্থান নেমে গিয়েছে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দু’টি নাম- ভারত ও চীন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com