শফীর মৃত্যু ‘পরিকল্পিত হত্যা’: মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

0

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’র অভিযোগে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে প্রতিবাদী আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও আলেম সমাজ। 

গতকাল সোমবার হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আল্লামা আহমদ শফী স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজত ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়াতের পরিবারের করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ওলামা-মাশায়েকরা।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্ত সৃষ্টির মাধ্যমে আলেম সমাজকে বিতর্কি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টে ষড়যন্ত্রকারী যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানানো হয়।

সেখানে হেফাজত নেতারা আরও বলেন, আল্লামা শফী যে স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করেছেন, তা তার বড় ছেলে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি মিডিয়ার সামনে পরিষ্কারভাবে জাতিকে জানিয়েছেন। হাটহাজারী মাদরাসার সকল শিক্ষক এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন এবং মৃত্যুর পূর্বাপর দেশসেরা দুটি হাসপাতালের রিপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেটের মাধ্যমেও দেশবাসীর সামনে তা স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এরপরও স্বার্থান্বেষী মহল তার স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। 

বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি এবং অদৃশ্য শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ দেশের জননন্দিত আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও শীর্ষ মুরব্বিদের ব্যাপারে বেয়াদপিমূলক বক্তব্য ও আচরণ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সারা দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে, এ নিয়েও তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সচেতন মহল একটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

আল্লামা আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শিপলু কুমার দে’র আদালতে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শফীর শ্যালক মাইনুদ্দিন। মামলায় মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন ও মো. শহীদুল্লাহসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৮০-৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

সকালে মামলা দায়েরের পর ওইদিন রাত ৮টার দিকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর পাঠানো এক বিবৃতিতে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে হুমকি দেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব। 

বিবৃতিতে জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক, যা দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাছাড়া আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ এবং হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন।’

একটি কুচক্রীমহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি মহল আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। তাকে ব্যবহার করে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা আলেমদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে।’

‘অনতিবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে এবং এ মিথ্যা মামলায় কাউকে হয়রানি করা হলে পরামর্শ সাপেক্ষে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের এ শীর্ষ আলেম।

এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সংগঠনটির মহাসচিব পদ নিয়েও নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কে হচ্ছেন হেফাজতের নতুন মহসচিব, এনিয়েও দলের অভ্যন্তরে নানা কানাঘুষা চলছে বলে জানা গেছে। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শীষনেতাদের বৈঠকে নতুন মহাসচিব নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের একাধিক শীর্ষ নেতা। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com