সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যায় বিএসএফের পক্ষে আ.লীগের মন্ত্রীরা নির্লজ্জ সাফাই গাইছেন: রিজভী
সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকারও এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন ‘বন্ধনের সোনালি অধ্যায়’ রচনা করতে ভার্চুয়াল আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তখন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি নিরীহ দরিদ্র যুবক জাহিদুল ইসলামের লাশ পড়েছিল কাঁটাতারের নীচে।’
তিনি বলেন, ‘‘সামিট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নির্লজ্জভাবে বলেন, ‘সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে।’ কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষদেরকে হত্যা করারই ন্যায্যতা দান করছে। এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। সুতরাং সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকারও এড়াতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘জানতে ইচ্ছে করছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কি স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি? বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনেও সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হয়! বিজয়ের মাসে, এমনকি বিজয় দিবসে সীমান্তে মানুষ মারা যাওয়ার পরও যে মন্ত্রীর কোনো বিকার নেই, এরা আত্মা বিক্রি করেছেন বলেই সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যায় বিএসএফ এর পক্ষে নির্লজ্জ সাফাই গাইছেন।’
রিজভী বলেন, ‘২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর লাশ। সেই বর্বর দৃশ্য আজও দেশের মানুষকে ব্যথিত করে। প্রতিটি দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশের জনগণ আশা করেছিল, ফেলানী হত্যার বিচার হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আইন ও শালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, এই সরকারের গত ১২ বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বাংলাদেশিকে সীমান্তে হত্যা করেছে বিএসএফ। এই করোনার মধ্যেও গত প্রায় এক বছরে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ৪৫ জন বাংলাদেশি। এছাড়াও সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড ও নদীতে প্রায়ই বাংলাদেশের মানুষের রহস্যজনক লাশ পাওয়ার ঘটনা খবরে আসে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্ডার গার্ডের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠক করে লাশ গ্রহণ ছাড়া ভরসা রাখার মতো কোনো তৎপরতাই এখন চোখে পড়ে না। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে পাইকারী হারে খুন করে যাবে, অথচ শুধু চুপচাপ নয়, বাংলাদেশ সরকার বরং বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার বৈধতা দিচ্ছে।’