কিভাবে কাজ করে করোনার প্রতিষেধক?

0

আর কিছু দিন পর আমাদের দেশেও শুরু হয়ে যাবে করোনাভাইরাসের টিকাকরণ। ‘নিও নর্মাল’ নয়, ফের ‘নর্মাল’ জীবনযাত্রাতেই ফিরে আসতে টিকাকরণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কিভাবে কাজ করে প্রতিষেধক, তা নিয়ে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তরফে লিখিত আকারে সম্প্রতি গুছিয়ে বোঝানো হয়েছে গোটা বিষয়টা।

একথা আমরা জানি যে মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। রোগ বহনকারী কোনো জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় অ্যান্টিবডি। রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেনের সঙ্গে লড়াই করে তাকে হারিয়ে দেয়। অ্যান্টিবডি আবার গঠিত হয় প্যাথোজেনের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিজেনের কারণে। প্রতিটি আলাদা অ্যান্টিজেনের জন্য আলাদা অ্যান্টিবডির প্রয়োজন। আমাদের শরীরে বহু প্রকারের অ্যান্টিবডি রয়েছে। কিন্তু যখন নতুন কোনো অ্যান্টিজেন শরীরে প্রবেশ করে, তার জবাবে অ্যান্টিবডি গঠিত হতে সময় লাগে, আর এই সময়ের মধ্যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এখানেই আসে প্রতিষেধকের ভূমিকা। অ্যান্টিজেনের যে অংশগুলো অ্যান্টিবডিকে সজাগ করে দেয়, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকে না। ফলে অ্যান্টিবডি গঠিত হয় না। প্রতিষেধকের কাজ অ্যান্টিজেনের সেই নিষ্ক্রিয় অংশগুলোকেই সক্রিয় করে দেয়া। আধুনিক প্রতিষেধকগুলো আবার নিজেই অ্যান্টিজেন গঠন করে দেয়। এই অ্যান্টিজেন শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার জায়গায় শুধুমাত্র অ্যান্টিবডিদের সজাগ করে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে একাধিক ডোজের প্রয়োজন, একবার দেয়ার পর কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে দিতে হয়। বহু দিন বেঁচে জীবিত থাকতে পারে এমন অ্যান্টিবডি তৈরিতে এই কাজ করা হয়।

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অ্যালার্জির মতো শারীরিক অসুস্থতা বা গর্ভাবস্থার জন্য প্রতিষেধক নিতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? হু জানাচ্ছে এখানেই কাজে আসবে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী প্রতিরোধ। যারা প্রতিষেধক নিতে অপারগ, তাদের থাকতে হবে টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে। একটা গোষ্ঠীর মধ্যে যখন অনেকেই প্রতিষেধক প্রাপ্ত, প্যাথোজেনের পক্ষে রোগ ছড়ানো মুশকিল। তাই অন্যেরা যত বেশি টিকা নেবেন ততই নিশ্চিন্ত।

সূত্র : আজকাল

দুনিয়ায় প্রতি চারজনের একজন ২০২২– এর আগে টিকা পাবে না
একের পর এক সংস্থার তৈরি করোনার টিকা বাজারে আসছে। ব্রিটেন। তার পর আমেরিকা। সাধারণ মানুষকে এই সব দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কানাডা, সৌদি আরব, বাহরাইনেও শুরু হচ্ছে।

এত কিছুর পরেও দুনিয়ায় একটা বড় অংশ টিকা থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাবে। মধ্য এবং নিম্ন আয়ভোগী দেশের বাসিন্দারাই যে এই তালিকায় থাকবে, তা না বললেও চলবে। আমেরিকার জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ একটি সমীক্ষা করে জানিয়েছে, দুনিয়ায় প্রতি চারজনের একজন ২০২২ সালের আগে করোনার টিকা পাবে না।

তার কারণ, যত টিকা উৎপাদন হচ্ছে বা হবে, তার ৫১ শতাংশই ধনী দেশগুলো নিজেদের জন্য কিনে ফেলেছে। অথচ এই দেশগুলোয় দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন। আর গরিব দেশগুলোয় থাকেন ৮৫ শতাংশ। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ধনী দেশগুলো ১৩টি টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার থেকে ৭৫০ কোটি ডোজ আগাম কিনে রেখেছে।

এক সঙ্গে ১০০ কোটিরও বেশি ডোজ কিনেছে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া। অথচ দুনিয়ায় যত জন এখন করোনা আক্রান্ত, তার এক শতাংশেরও কম জন রয়েছেন এই তিন দেশে। এই পরিস্থিতিতে টিকা সংস্থাগুলো পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করে সর্বাধিক উৎপাদন করলেও দুনিয়ার ২৫ শতাংশ মানুষ আগামী বছর বা তার পরের বছর টিকা পাবেন না।

পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স কোয়ালিশন গত সপ্তাহে জানিয়েছে, টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর নিজেদের প্রযুক্তি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত। যাতে অন্য সংস্থা দ্রুত টিকা তৈরি করে গোটা দুনিয়ার মানুষকে দিতে পারে। সমীক্ষাকারী সংস্থার নিদান, টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর আর স্বচ্ছতা থাকা দরকার। তাদেরও এগিয়ে এসে গরিব দেশগুলোকে সহায়তা করা দরকার।

সূত্র : আজকাল

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com