টানা ষষ্ঠ হারের পর বরিশালের দিকে তাকিয়ে রাজশাহী

0

টুর্নামেন্টে একমাত্র দল হিসেবে ওভারপ্রতি ৮-এর বেশি রান নিয়েছিল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী, অন্যদিকে একমাত্র দল হিসেবে ওভারপ্রতি ৭-এর কম রান খরচা করেছিল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। ফলে দুই দলের মুখোমুখি ম্যাচে লড়াইটা ছিল মূলতঃ রাজশাহীর ব্যাটিং বনাম চট্টগ্রামের বোলিং। যেখানে আধিপত্য বিস্তার করল চট্টগ্রামের বোলাররাই, দলকে ম্যাচ জেতাল ৩৬ রানের ব্যবধানে। এ পরাজয়ের ফলে প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা প্রায় শেষই হয়ে গেল রাজশাহীর।

অথচ টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে উড়ন্ত সূচনা করেছিল রাজশাহী; কিন্তু এরপর আর জয়ের দেখা পায়নি তারা। আজ (শনিবার) রাউন্ড রবিন লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে তারা হারল টানা ষষ্ঠ ম্যাচ।

রাজশাহীর পরাজয়ের ফলে পথ খুলে গেল বরিশালের সামনে। দিনের অপর ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকার মুখোমুখি হবে বরিশাল। সেই ম্যাচে জিতলে কোনো হিসেব ছাড়াই প্লে-অফে চলে যাবে বরিশাল। এমনকি অল্প ব্যবধানে হারলেও রাজশাহীর সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েই সেরা চারে যেতে পারবে তামিম ইকবালের দল।

রাউন্ড রবিন লিগের শেষদিনের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের জোড়া ফিফটির সঙ্গে শামসুর রহমান শুভর শেষের ঝড়ে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় চট্টগ্রাম। যা তাড়া করতে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৮ উইকেটে ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেননি রাজশাহী। প্রথম রাউন্ডে ৮ ম্যাচে মাত্র ২ জয় নিয়ে শেষ করল রাজশাহী। অন্যদিকে ৭টি ম্যাচ জিতেছে চট্টগ্রাম।

পেস বোলিংয়ের জন্য আদর্শ কন্ডিশনে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে স্পিনাররা। রাজশাহীর স্পিনাররা যেখানে শুরুতে রান বিলিয়ে উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনারকে, সেখানে রাজশাহীর টপঅর্ডারকে মাথা তুলেই দাঁড়াতে দেয়নি চট্টগ্রামের স্পিনাররা। এতে অবশ্য দায় ছিল রাজশাহীর ব্যাটসম্যানদেরও। কাণ্ডজ্ঞানহীন শট খেলে আসা-যাওয়ার মিছিলে নাম লিখিয়েছেন আনিসুল ইমন, নাজমুল শান্তরা।

চট্টগ্রামের করা ১৭৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শরীফুল ইসলামের করা প্রথম ওভারেই একটি করে চার মারেন রাজশাহীর দুই ওপেনার ইমন ও শান্ত। অফস্পিনার নাহিদুলের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তেড়েফুঁড়ে উইকেট ছেড়ে মারতে যান ইমন, পারেননি ব্যাটে-বলে করতে, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে তাকে স্ট্যাম্পিং করেন লিটন দাস। নাহিদুলের পরের ওভারে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নিজের উইকেট হারান ১১ রান করা শান্ত।

তিন নম্বরে নামা রনি তালুকদার ইতিবাচক শুরুই করেছিলেন। একটি করে চার ও ছয় মেরে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম বোলারদের। কিন্তু তিনিও পারেননি নাহিদুল ধাঁধাঁ ভেদ করতে। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে নাহিদুলের বোলিংয়ে জিয়াউর রহমানের হাতে ধরা পড়েন ১৪ বলে ১৬ রান করা রনি। শুরুর তিন ব্যাটসম্যানকে পাওয়ার প্লে’তে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় রাজশাহী। প্রথম ৬ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩৫ রান।

পাওয়ার প্লে শেষে সপ্তম ওভারেই চতুর্থ উইকেট পেতে পারত চট্টগ্রাম। কিন্তু রাকিবুলের করা সেই ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে নুরুল হাসান সোহানের ক্যাচ ছেড়ে সৌম্য সরকার। পরে অবশ্য রাকিবুলই নেন রাজশাহীর চতুর্থ উইকেট। রয়েসয়ে খেলতে থাকা ফজলে রাব্বিকে ইনিংসের ১১তম ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রাকিবুল। আউট হওয়ার আগে ২০ বল খেলে ২ ছয়ের মারে ১৯ রান করেন ফজলে রাব্বি।

তার বিদায়ের সময় রাজশাহীর রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৬৯, জয়ের জন্য শেষ ৫৪ বলে দরকার ছিল ১০৭ রান। বলপ্রতি প্রায় দুই রানের চাহিদায় ঝড়ো শুরুই করেছিলেন শেখ মেহেদি হাসান। মোসাদ্দেক সৈকতের করা ১৪তম ওভারে জোড়া ছক্কায় তুলে নেন ১৫ রান। শরীফুলের করা ১৫তম ওভারের প্রথম বলেও মারেন দৃষ্টিনন্দন এক ছয়। সে ওভারে আরেকটি ছক্কার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যান ডিপ এক্সট্রা কভারে, দুর্দান্ত এক ম্যাচে মেহেদির ১৭ বলে ২৬ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান নাহিদুল ইসলাম।

এরপর আর তেমন কিছু বাকি ছিল না রাজশাহীর ইনিংসে। শুরু থেকে ব্যাটে-বল ঠিকঠাক করতে না পারা নুরুল সোহান কিংবা তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শুধু পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন। সোহান খেলেন ২ চারের মারে ২৮ বলে ২৮ রানের ইনিংস, এক ছয়ের মারে ৪ বলে ৯ রান করে আউট হন সাইফউদ্দিন। শেষে সানজামুল ইসলাম, আরাফাত সানিদের ব্যাটে ১৩৯ রানে পৌঁছায় রাজশাহীর সংগ্রহ। চট্টগ্রাম পায় ৩৬ রানের জয়।

ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বেঁচে যান সৌম্য। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে আউটসাইড এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সৌম্য। সেটি ঠিকঠাক ধরলেও আবেদন করেননি নুরুল হাসান সোহান কিংবা দলের অন্য কেউ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটের কানায় বেশ ভালোভাবেই লেগেছিল সেটি। প্রথম ওভারেই এমনভাবে বেঁচে যাওয়ার পর আর সুযোগ দেননি সৌম্য।

রাজশাহীর দুই স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান ও আরাফাত সানির ওপর চড়াও হন শুরু থেকেই। অপরপ্রান্তে লিটনের ব্যাটে ছিল শিল্পের ছোঁয়া। সৌম্য হাঁকাচ্ছিলেন আগ্রাসী ছক্কা আর দৃষ্টিনন্দন শটে গড়িয়ে সীমানাছাড়া করছিলেন লিটন। ইনিংসের সেরা শট ছিল মেহেদির ফ্লাইট দেয়া মিডলস্ট্যাম্পের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে এক ড্রপে পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে।

তবে লিটনের ইনিংসটিও ছিল জীবন পাওয়া। ব্যক্তিগত ২২ রানের সময় রেজাউর রাজার বলে পয়েন্টে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন ফজলে রাব্বি। ক্যাচটি অবশ্য বেশ কঠিনই ছিল, পুরো শরীর বাড়িয়ে ডাইভ দিয়েও হাতে রাখতে পারেননি ফজলে রাব্বি। পরে আবার ব্যক্তিগত ৪০ রানের সময় ফিল্ডারের ভুলে নিশ্চিত রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যান লিটন। জীবন পেয়ে ফিফটি হাঁকান সৌম্য-লিটন দুজনই।

ইনিংসের ১৩তম ওভারে ব্যক্তিগত পঞ্চাশে পৌঁছান সৌম্য, পরের ওভারে চলতি আসরে নিজের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন লিটন। পঞ্চাশে পৌঁছে ৪০ বল খেলেন সৌম্য, হাঁকান ২ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা। অন্যদিকে ৩৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটি করেন লিটন। ব্যক্তিগত মাইলফলকের পাশাপাশি জুটিতেও শতরান যোগ করে ফেলেন এ দুজন, ১২ ওভারে ঠিক ১০০ রান হয় চট্টগ্রামের।

জুটি ভাঙার আশায় ১৩তম ওভারে প্রথমবারের মতো ডানহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার আনিসুল ইসলাম ইমনকে আক্রমণে আনেন রাজশাহী অধিনায়ক। নিজের প্রথম ওভারে ৬ রান খরচ করেন ইমন, দ্বিতীয় ওভারে সৌম্যর কাছে হজম করেন ছক্কা। তবে ছক্কার পরের বলেই দারুণ এক স্লোয়ারে সৌম্যকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান ইমন, ভেঙে দেন উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ১২২ রানে সাজঘরে ফেরার সময় সৌম্যর নামের পাশে ছিল ৪৮ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ের মারে ৬৩ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে ৬২ রান করেছিলেন সৌম্য।

ওপেনিং সঙ্গীকে হারানোর পর লিটনও যেতে পারেননি বেশিদূর। রেজাউর রাজার করা ১৬তম ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে সোজা বোল্ড হয়ে যান ৪৩ বলে ৫৫ রান করা লিটন। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে যেন উজ্জীবিত হয় রাজশাহী। টাইমআউটের পর ১৭তম ওভারের প্রথম বলে চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে (৩ বলে ২) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন ইমন, সেই ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে পারে চট্টগ্রাম। ডেথে বোলিং করতে এসে মোসাদ্দেক সৈকতের (৪ বলে ৩) উইকেট নেন সাইফউদ্দিন।

প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৫ রান দিলেও নিজের শেষ ওভারে গড়বড় করে ফেলেন রেজাউর রহমান রাজা। দুইটি বিমারে নো বলসহ শামসুর রহমান শুভর কাছে ছক্কা হজম করেন তিনটি। সেই ওভারে মাত্র ৩ বল করে ২৩ রান দেন তিনি। দুই বিমারের কারণে আর বোলিং করতে পারেননি সেই ওভারে। তার বাকি থাকা তিন বল করেন আনিসুল ইমন। এই তিন বলে এক ওয়াইডে মাত্র ১ রানই দেন ইমন। সবমিলিয়ে ৩.৩ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। যা তার কুড়ি ওভারের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।

শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনও করেন বিমার। সেই বলে ছক্কা হাঁকান জিয়াউর রহমান। এছাড়া আরও দুইটি ওয়াইড বল করেন তিনি। সবমিলিয়ে সেই ওভারে আসে ১৩ রান। জিয়াউর ৭ বলে ১০ ও শামসুর ১৮ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com