বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের হানা: ভয়ভীতি প্রদর্শন
ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার। এই দুই আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনেক মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করছে। বিএনপি প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, এলাকায় সন্ত্রাসী, পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাব বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। একই সাথে অনেক ভোটারেরা বলেছেন এলাকায় ধম ধমে (থমথমে) পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জানি না আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবো কি না।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনকে ঘিরে যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ১০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১৩ নভেম্বর (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল বুধবার রাত ১২টা থেকে ১২ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচল করতে পারবে না। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনি এজেন্ট এবং দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ কড়াকড়ি শিথিল করা যাবে। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক, ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগের যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।
ঢাকা-১৮ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ জন। এ আসনে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- বিএনপির এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান, জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন সরকার, গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ওমর ফারুক ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) মবিবুল্লাহ বাহার।
ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহতাবউদ্দিন বলেন, ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত রয়েছে। ইভিএমসহ নির্বাচনি সামগ্রী বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৩ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় ও বিএনপির সেলিম রেজা।
আজ ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন আ.লীগ ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে : এস এম জাহাঙ্গীর
ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখানে ভোটের পরিবেশ নেই। আমরা শুনেছি, আওয়ামী লীগ বিভিন্ন থানা থেকে লোক এনে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে। তারপরও জনগণ আমাদের সাথে থাকায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি সফল হব। গতকাল বুধবার নিজ নির্বাচনি কার্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ২৪ অক্টোবর থেকে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েও র্কর্মসূচি করতে পারিনি, প্রতিটি গণসংযোগে আওয়ামী লীগ বাধার সৃষ্টি করেছে। তিনি জানান, গত ৭ নভেম্বর গভীর রাতে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ব্যানার নির্ভর ঘরে আওয়ামী লীগ নিজেরা আগুন দিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপির ২৩৫ জন নেতার নামে মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এমনও বলা হচ্ছে, ১২ তারিখের আগে যদি কাউকে এলাকায় দেখা যায় তাদের মেরে ফেলা হবে। মহিলাকর্মীরাও নিস্তার পাচ্ছে না। এভাবেই চলছে। আওয়ামী লীগের নানা সন্ত্রাসী ঘটনার চিত্র তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, আমরা যখন পুলিশকে বলি এসব ঘটনায় মামলা কেন নিচ্ছেন না? জবাবে তারা বলে ওপরে যোগাযোগ করেন। নির্বাচনের সময় ওপর বলতে যা বুঝি-নির্বাচন কমিশন। আমরা তাদের সাথেও দুইবার মিটিং করেছি কোনো সহযোগিতা পাইনি। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সবাই পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে। এ কারণে ভোটারাও সঙ্কিত। তারপরও আমরা জানি, ভোটাররা দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারছে না। আশা করছি, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে। ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তারা ভোট দেবে। আমাদের পোলিং এজেন্টরাও প্রতিটি বুথে থাকবে। নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রের আশপাশে থাকবে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। জনগণের ভোটে ধানের শীষের বিজয় হবে। এখান থেকেই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও গণতন্ত্রের উত্থান হবে।
বিদ্যমান বাস্তবতায় ঢাকা-১৮ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, জনগণ যেহেতু আমাদের সাথে আছে তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি, আমরা সফল হবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চায়। কিন্তু তাদের যেতে দেয়া হয় না। সরকার ও সিইসি যে ঘটনা ঘটায় যে আগে সন্ত্রাস করে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিস্টার্ব করে। একজন সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে বাসায় ফিরে আসতে চায়। যখন দেখে সন্ত্রাস-পুলিশি হয়রানি তখন ভোট দিতে যেতে তারা ভয় পায়। আমরা জনগণের কাছে গিয়ে বলার চেষ্টা করেছি, যতই বাধা আসুক আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৩৬ কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। সেখানে কি আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেই? তার মানে আওয়ামী লীগ বিনাভোটেই নির্বাচিত হতে চায়। তারা ঢাকা-১৮ আসনেও সেই চেষ্টা করছে।
দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে সমর্থন করে উল্লেখ করে ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, কিন্তু যখন একটি রাষ্ট্র ভোটাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সেখানে আমরা নিরুপায় হয়ে যাই। তারপরও জনগণকে সাথে নিয়ে এসব সন্ত্রাস প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। ভোটারদের যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া না হয়, আমাদের পোলিং এজেন্টদের যদি বের করে দেয়া হয় তাহলে জনগণ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী কাজ করবো।
সংবাদ সম্মেলনে আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানার নেতার্কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি হানা দেয়ার একটি চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের যে পরিবেশ তা এখানো পাচ্ছি না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আপনারা দেখেছেন এর আগে ঢাকা-৫ আসনে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, ভোটারদের কেন্দ্র যেতে দেয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আমান উল্লাহ আমান, সমন্বয়ক আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আনজু, এজিএম শামসুল ইসলাম প্রমুখ।