ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে পাকিস্তান কেন শঙ্কায়?

0

গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারের ভারত সফরের সময় সই হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-ভারত গোয়েন্দা চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। এই চুক্তির ফলে কাশ্মির নিয়ে ভবিষ্যতের যেকোনো সঙ্ঘাতে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট ফর জিও-স্প্যাটিয়াল কোঅপারেশন নামের চুক্তিটি গত মঙ্গলবার তৃতীয় টু প্লাস টু মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের সময় সই হয়।
এই চুক্তির আওতায় দূর পাল্লার নেভিগেশন ও মিসাইল টার্গেট করার জন্য আধুনিক স্যাটেলাইট ও টোপোগ্রাফিক্যাল তথ্য ভারতকে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বিইসিএ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে মার্কিন সামরিক স্যাটেলাইটগুলোর সমৃদ্ধ তথ্য প্রদান করবে।

নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক সরঞ্জাম রফতানিকারক।
পাকিস্তান সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার উল হক কাকার নিক্কিই এশিয়াকে বলেছেন, এই চুক্তির দিকে সতর্ক নজর রাখছে পাকিস্তান। কারণ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব রয়েছে।

কাকার আরো বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য আরো বদলে যাবে। এতে করে চীনের দিকে আরো বেশি ঝুঁকবে পাকিস্তান।
পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, বিইসিএ ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে।
উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রগ্রামের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তারা এর ফলে টার্গেট শনাক্ত করার সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, বালাকোট হামলার পর যা ঘটেছিল, তা এড়াতে সহায়ক হবে বিইসিএ। ওই সময় ভারত সত্যিই টার্গেটে আঘাত হানতে পেরেছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল।

গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরের একটি বহরে সন্ত্রাসী হামলার পর খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে পাকিস্তানের বালাকোট অঞ্চলের বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়া দিল্লি দাবি করে, তারা একটি সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আঘাত হেনেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বোমাগুলো টার্গেটে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেগুলো জনহীন এলাকায় পড়েছিল।
কুগেলম্যান আরো বলেন, ভারতের জন্য বিইসিএর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সীমান্তে চীনা স্থল বাহিনী ও সাগরে নৌবাহিনীল চলাচল শনাক্ত করা। পাকিস্তান-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি উভপক্ষই জিরো-সাম লেন্স দিয়ে দেখার বিষয়টি বিবেচনা করার প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদের অনেকে বিশ্বাস করে যে এখন পাকিস্তানের নিরাপত্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে।

পাকিস্তান সরকারে কিছু কিছু অংশ আশঙ্কা করছে, বিইসিএ থেকে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ফলে বর্তমানে ইসলামাবাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মির-গিলগিট-বাল্টিস্তান অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই অঞ্চল দিয়েই চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড করিডোরটি পাকিস্তানের প্রবেশ করেছে।
অবশ্য, অনেকে মনে করে না যে এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান বা চীনের প্রতি আশু নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি হবে।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জেমস এম ডোরসে বলেন, বিইসিএর আওতায় আমেরিকান গোয়েন্দা তথ্য পেলেই ভারত এগিয়ে যাবে পাকিস্তানের দিকে এমনটা মনে হয় না, সামরিকভাবে শক্তিশালী চীনের দিকে যাওয়া তো পরের কথা। ভবিষ্যতে যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হয়, তবে অবশ্যই সিপিইসি প্রকল্পগুলোর ওপর প্রভাব পড়বে।
তিনি নিক্কিইকে বলেন, অবশ্য এ ধরনের সঙ্ঘাতে আমেরিকা কোনো পক্ষ নেবে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমি এর বদলে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করব।
কুগেলম্যান বলেন, নয়া দিল্লির কাছ থেকে প্রচুর হুমকি আসছে। তবে তিনি মনে করেন, তারা অন্য কিছুর চেয়ে কথা বলে অনেক বেশি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় নয়া দিল্লি পাকিস্তানি সামরিক অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য চেয়েছিল ভারত। কিন্তু ওয়াশিংটন তা দিতে অস্বীকার করায় ভারত তার নিজস্ব স্যাটেলাইট সিস্টেম নির্মাণে উদ্যোগী হয়।
বিশেষজ্ঞরা এবার ভিন্ন কিছু ভাবছেন। কুগেলম্যান বলেন, কার্গিল যুদ্ধের সময়কার চেয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ভিন্ন। ওই সময় তেমন আস্থা ছিল না, নিরাপত্তাগত সম্পর্ক জোরদার ছিল না।আর এ ধরনের স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করার কোনো চুক্তিও ছিল না।
চীনা মিডিয়াও বিইসিএ চুক্তি চীনের প্রতি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করবে বলে মনে করে না। সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চীনের চেয়ে অনেক দিক থেকেই পিছিয়ে। কেবল বিইসিএ তা পূরণ করতে পারবে না।

গ্লোবাল টাইমস জানায়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একই ধরনের সামরিক সহযোগিতা হয়েছিল ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়। তবে তা চীনের জন্য বড় ধরনের কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ওই সময় আজকের আধুনিক চীনের তুলনায় অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে বেশ দুর্বল ছিল চীন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে বিইসিএ চুক্তি সই হয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে গুঞ্জনের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছে।
অবশ্য খুব কম পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করেন যে ওয়াশিংটনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসবে। ডোরসে বলেন, যিনিই নির্বাচনে জয়ী হন না কেন, ইন্দো-ইউএস সম্পর্ক একই রকম থাকবে। ফলে বিইসিএ বহাল রাখার জন্যই করা হয়েছে।

সূত্র : নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com