হেরে গেলে কারাগারে যেতে হবে ট্রাম্পকে!

0

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে বেশির ভাগ পূর্বাভাসেই হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে ছিলেন। সব বিবেচনাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেছেন। তবে পূর্বাভাস তো পূর্বাভাসই, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয় নির্বাচনের দিন। ব্যালট বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকেই তার মন বদলাতে পারেন।

পরলোকগত ফ্রাঙ্ক নুম্যান, গত নির্বাচনের আগে অব্যাহতভাবে বলছিলেন, ট্রাম্পই জয়ী হবেন। কারণ কয়েক দশক ধরে মিডওয়েস্ট রাজ্যগুলো ‘ডেমোক্র্যাট’দের ভোট দেয়ায় হিলারি ক্লিনটন মনে করেছিলেন, তিনি তাদের ভোট অবধারিতভাবেই পাবেন। কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্রমজীবী শ্রেণির শ্বেতাঙ্গ ভোটারেরা, বিশেষ করে যাদের কলেজ শিক্ষা ছিল না কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করতেন, তারা দলে দলে পার্টি ছাড়ছিল।তারা মনে করছিল, হিলারি ক্লিনটন কোস্টাল এলিটদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর এসব এলিট চাকরি ও মেডিক্যাল বীমা নিয়ে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ ছাড়াই ধনী হচ্ছিল। রাজনীতির বর্তমান মডেলটি পরিষ্কারভাবেই তার উপযোগিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। গ্রামীণ ভোটাররা বিপুল সংখ্যায় ভোট দিচ্ছে। তারা মনে করছে, এস্টাবলিশমেন্ট তাদের উপেক্ষা করেছে, কোস্টাল এলিটরা তাদেরকে পেছনে ফেলে রাখছে, তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও মাথাপিছু ব্যালটের হিসাবে ট্রাম্প প্রায় ২০ লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। কিন্তু মিড-ওয়েস্ট রাজ্যগুলোর ইলেক্টরাল ভোটের ভারসাম্য চলে গিয়েছিল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের কারছে। তিনি ২০১৬ সালের জন্য এই পরিকল্পনাই গ্রহণ করেছিলেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি লোকজনকে বিদ্রুপ করেছেন, অপমান করেছেন। আবার ক্ষমতাও চেয়েছেন। সেইসাথে নারীদের প্রতি প্রশ্নবোধক মনোভাবও ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে যেসব ভোট গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে কোনো ক্ষতি করেননি। ট্রাম্প আমেরিকা ফার্স্ট নামে নতুন রাজনৈতিক রুটের প্রস্তাব করেছেন, চাকরি সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছৈন, আমেরিকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন, অভিবাসন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এগুলোর সবই ছিল জনপ্রিয়।

আরেকটি ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন, তা হলো আমেরিকার জড়িত থাকা অনেক যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি। এসব যুদ্ধে কেবল সাধারণ মানুষের সন্তানেরাই মারা যাচ্ছিল না, সেইসাথে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করার অর্থও নষ্ট হচ্ছিল। আবার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের কথাও তিনি শুনেছেন। ক্রীতদাসত্বের আমল থেকে চালু থাকা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ কখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। ট্রাম্প তাদের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা করেছিলেন।

আমেরিকা বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার মুখে পড়েছে। আবার তার অর্থনৈতিক শক্তিও ক্ষয়ে আসছে। বিশ্বের পুলিশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মার্কিন নির্বাচকদের কাছে আর আবেদনময়ী মনে হয় না।তাছাড়া বেশির ভাগ আমেরিকান কখনো বিদেশে যায়নি। ফলে বাকি বিশ্ব সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাও নেই। গত চার বছর ধরে ট্রাম্প ব্যবসাবিষয়ক কেন্দ্রীয় বিধিবিধান শিথিল করেছেন, করপোরেট ও আয়কর হ্রাস করেছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র চার লাখ ৮০ হাজার ম্যানুফেকচারিক চাকরি সৃষ্টি করেছেন।

২০২০ সালের মার্চের আগে পর্যন্ত তিনি পুনর্নির্বাচনের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। মার্কিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে ছিল। এপ্রিল নাগাদ তা আরো চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনার মুখে ছিল। তখনই করোনাভাইরাসের আঘাত আসে। কিন্তু ডা: ফশের নেতৃত্বাধীন তার নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের কথায় তিনি কর্ণপাত করেননি।আবার তার নিজের করেনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে তিনি গর্বভরে যেসব কথা বলেছেন, সেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও সাধারণ আমেরিকানদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ছিল।
ট্রাম্পের ২০১৬ সালের প্রচারণায় নিজেকে তিনি আইন প্রয়োগে কড়াকড়ি চান বলে প্রচার করেছিলেন। তার প্রেসিডেন্ট আমলে তা বহাল রয়েছে। বর্ণবাদী অবিচারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দেশব্যাপী বিক্ষোভের সময় তিনি পুলিশকে সমর্থন করেছেন।

ব্রুকিংসের পরিচালিত এক জরিপের পর অতি সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের সম্ভাবনা কম হলেও আছে।
ট্রাম্পের জন্য সমস্যা হলো, প্রথম প্রেসিডেন্ট বিতর্কে তিনি খুবই খারাপ করেছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি দ্বিতীয়টি বাতিল করেছেন। আর তৃতীয়টি তার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল না, এবং ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ২৩ অক্টোবর নাগাদ ৪৬ মিলিয়ন আমেরিকান তাদের ভোট দিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে এসব ভোটে ট্রাম্প হেরে যেতে পারেন। তবে ট্রাম্প এগুলাকে ভুয়া ভোট হিসেবে চ্যালেঞ্জ করবেন।

আবার ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় তার জন্য বিরাট ঝুঁকির কাজ হবে। তিনি নির্বাচনে হেরে গেলে তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ আনা হতে পারে। আবার তিনি হেরে গেলে তার নির্বাচনী তহবিলের দেউলিয়াত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠবে। আর তাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে জেলেও যেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে বাইডেনের ওপরই তিনি ভরসা করতে পারেন। প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিশ্চয় জেলে যাওয়ার রেকর্ডটি করতে চান না। ফলে বাইডেন জয়ী হলে তিনি যদি তাকে ক্ষমা করেন, তবেই তিনি রক্ষা পেতে পারেন।

আরেকটি আশঙ্কা রয়েছে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে মিডওয়েস্টের সশস্ত্র মিলিশিয়ারা সক্রিয় হয়ে ওঠতে পারে। এতে করে অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন গুঞ্জনও রয়েছে, হেরে গেলে ট্রাম্প তার পদ খালি করবেন না। বরং সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর ধারা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স ও আটজন ক্যাবিনেট কর্মকর্তাই সিদ্ধান্ত নেবেন যে প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারেন না। তারা লিখিতভাবে তা স্পিকারের কাছে পাঠাবেন।দায়িত্বে থাকলে হলে হাউসের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে। এই সমর্থন না পেলে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরেই যেতে হবে। তবে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি এবং এবারো ঘটনার সম্ভাবনা কম।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com