মালদ্বীপে চীন-ভারত লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র

0

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর বুধবারের ঘোষণার পর আবারো প্রমাণিত হলো যে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পর ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে দূতাবাস খুলবে যুক্তরাষ্ট্র।

পম্পেইও তার টুইটার অ্যাকাউন্টে দ্বীপদেশটি সফরের সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সমর্থন প্রদান করার জন্য মালদ্বীপের বিপুল প্রশংসা করেন।
এতে মনে হচ্ছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পর্যন্ত মালদ্বীপের ভূমিকা বুঝতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। আসল কথা হলো, ওয়াশিংটন এখন বুঝতে পেরেছে, ছোট্ট দেশটিকে তারা তার ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যে ব্যবহার করতে পারবে।

সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক লিন মিনওয়াং বৃহস্পতিবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, মালদ্বীপে দূতাবাস খোলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে পারবে। মালদ্বীপে যদি চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা না থাকত, তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির দিকে তাকাত না পর্যন্ত, দূতাবাস খোলা তো দূরের কথা।
আর যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি যত বাড়বে, পানি তত ঘোলা হবে। এই যুক্তরাষ্ট্রই ছোট ছোট দেশকে প্রায়। ‘গেম অব চয়েজে’ নিয়ে আসে। কারণ তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সাথে তা খাপ খায়। তবে এসব দেশের জন্য ভালো হয় কোনো পক্ষ না নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। এতেই তাদের স্বার্থ সর্বোত্তমভাবে সংরক্ষিত হবে। অবশ্য, এসব দেশের স্বার্থ কখনো যুক্তরাষ্ট্রের মনে থাকে না।

ওয়াশিংটন কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই তার এই কৌশল ব্যবহার করেছে, এমন নয়। আফ্রিকার কথা ধরুন। আফ্রিকা দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ছিল না। কিন্তু চীন সেখানে যখন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে এলো, তখনই যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার ভূরাজনীতিব্যবস্থা ত্বরান্বিত করল। তারা এখন আফ্রিকা ও চীনের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটনের স্বার্থপরতা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

পরিবর্তিত আঞ্চলিক গতিশীলতার প্রেক্ষাপটে মালদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে সমর্থন করছে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে চীনের অবস্থানকে এই অঞ্চলে নিজের প্রাধান্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ভারত। ভারত চায় চীনা উত্থানকে দমন করতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে আসতে।
অথচ ভারত তার আঙিনায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ২০১৩ সালে মালদ্বীপের সাথে ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত স্টাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট ও সেখানে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল ভারত। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালদ্বীপ যখন প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করল, তখন ভারত তাতে সমর্থন দিয়েছে। কারণ এই চুক্তির ফলে ছোট্ট মালদ্বীপ ইন্দো-প্যাসিফিক কক্ষে চলে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এখন চীনকে তাদের অভিন্ন শত্রু মনে করে। আর এটিই তাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য, ভূরাজনৈতিক হিসাবের বদলে চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে মনোযোগ দিয়েছৈ। এটি তাকে আঞ্চলিক একীভূতকরণ ও উন্নয়ন বাড়াতে সহায়তা করছে।

ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ভারতের সম্মতি প্রদানের অর্থ হলো, ভারত কার্যত এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে আসা। ভারত যেহেতু ভারত মহাসাগরকে তার মূল স্বার্থ মনে করে, তাই এটি ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লিকে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com