জিমি কার্টারের পরিণতির দিকে ট্রাম্প!

0

দেখতে দেখতে একেবারেই ঘরের দুয়ারে চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন। শেষ সপ্তাহের প্রচারে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। দুই প্রার্থীই ভোটার টানতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি আর দোষারোপ করছেন পরস্পরের। বিশেষ করে ট্রাম্পের সব বক্তব্যেই প্রতিশ্রুতির বা যৌক্তিক কথার চেয়ে বাইডেনের দোষারোপই বেশি থাকছে। অবশ্য বিভিন্ন জরিপে ট্রাম্পের তুলনায় এখনো বাইডেন ৯ থেকে ১০ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। এ ধারাবাহিকতা চলছে সেই জরিপের শুরু থেকেই। এর মধ্যে অবশ্য ট্রাম্প চাইলে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু কয়েকটি ইস্যুতে তার অবস্থান এবং বক্তব্য সেটা হতে দেয়নি। সিএনএন এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলেছে, গত কয়েক মাসে ট্রাম্প সেসব সুযোগ নিজেই হাতছাড়া করেছেন। সংবাদমাধ্যমটি পৃথক আরেক বিশ্লেষণে বলেছে, ট্রাম্পের অবস্থা হতে পারে ১৯৮০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জিমি কার্টারের মতো। সেবার তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে ভয়াবহ পরাজয়ের শিকার হয়েছিলেন।

অবশ্য জনমত জরিপে ২০১৬ সালেও পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। সে বছর হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে ছিলেন জনগণের ভোটেও। তিনি ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখের মতো ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইলেকটোরাল কলেজে জিতে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার সুযোগ হয় তারই। তবে করোনাভাইরাস, অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, বর্ণবাদসহ নানা ইস্যুতে এবার যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে গত নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ খুবই কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাড়াছা এবার জরিপের পদ্ধতিও গতবারের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এবার জরিপের যে ‘চলক’গুলো ধরা হয়েছে তার পরিবর্তনের সুযোগ খুবই কম।

সিএনএন ও এসএসআরএসের সর্বশেষ জরিপে বাইডেন যেখানে ৯৩ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন সেখানে ট্রাম্প পাচ্ছেন মাত্র ৬ শতাংশ। গত নির্বাচনে অবশ্য হিলারি-ট্রাম্পের এ ব্যবধান ছিল খুবই সামান্য। গত রবিবার তিন রাজ্যের ভোটের প্রবণতায় পর্যবেক্ষণ করে সিএসবি নিউজ ও ইউগভ জানাচ্ছে, ওইসব জায়গায় লোকজন ট্রাম্পকে খুবই কম ভোট দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ওইসব রাজ্যে শেষ বিতর্কের আগেও এগিয়ে ছিলেন বাইডেন।

ট্রাম্পের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত ফ্লোরিডায় গত মাসে বাইডেনের সমর্থন ছিল ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৬ শতাংশ। তবে গত রবিবারের জরিপে সেখানে বাইডেনের সমর্থন ৫০ আর ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা ৪৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। জর্জিয়ায় গত মাসে বাইডেন পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্পর তুলনায় ১ পয়েন্টে। কিন্তু এখন সেখানে দুজনই সমান ৪৯ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন। নর্থ ক্যারোলিনায় গত মাসের তুলনায় বাইডেন যেখানে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে ৫১ শতাংশ জনমত পাচ্ছেন সেখানে ট্রাম্প পাচ্ছেন ৪৭ শতাংশ।

এছাড়া রিপাবলিকান ঘাঁটি টেক্সাসেও এগিয়ে আছেন বাইডেন। সেখানে তিনি ৩ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্পের চেয়ে। ১৯৭৬ সালের পর এখন পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই এ অঙ্গরাজ্য থেকে জয় পাননি কোনো ডেমোক্রেট প্রার্থী। কিন্তু মাত্র ৯ দিন আগে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অঙ্গরাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে গেছেন। ব্যবধান কম হলেও নির্বাচনের ঠিক আগে টেক্সাসের মতো অঙ্গরাজ্যে বাইডেনের এ এগিয়ে যাওয়াটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ডালাস মর্নিং নিউজ ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, টাইলার ২৫ অক্টোবর একটি জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। জরিপে অংশ নেওয়া সম্ভাব্য ভোটারদের ৪৮ শতাংশ তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিপরীতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৪৫ শতাংশ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, এমনিতেই এবার টেক্সাসে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই মনে হওয়াটাও রেড অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত টেক্সাসের জন্য অভিনব। এখন বাইডেন এখানে এগিয়ে যাওয়ায় টেক্সাসের ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট শেষ পর্যন্ত কোনদিকে যায়, তা নিয়ে ভীষণ আলোচনা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরেও অঙ্গরাজ্যটিতে বাইডেন থেকে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এখন সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে তার থেকে বাইডেন ৩ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে। আর নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে বাইডেন ট্রাম্প থেকে ২ পয়েন্টে এগিয়ে। এ ক্ষেত্রে বাইডেন এগিয়েছেন মূলত হিস্পানিক ভোটারদের নিজের দিকে টানার মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরে পরিচালিত জনমত জরিপে হিস্পানিক ভোটারদের ৩০ শতাংশ বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সর্বশেষ জরিপে এ সমর্থন হার বেড়ে ৪৮ শতাংশে দাঁড়ায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত কয়েক মাসে ট্রাম্প যদি বর্ণবাদ, জলবায়ু আর করোনা মহামারী নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতেন তাতেও তিনি কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি বরাবর শ্বেতাঙ্গদের পক্ষে কথা বলেছেন। কৃষ্ণাঙ্গদের দিকে ছুড়ছেন বর্ণবাদী মন্তব্যের তীর। ডেমোক্রেট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকেও বাজেভাবে বিদ্ধ করেছেন ট্রাম্প। আর নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েও মহামারীকে পাত্তা দেননি তিনি। দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর পরও তার প্রশাসন করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীন। গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডৌস করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের অপারগতার স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, তারা বরং এ রোগের প্রতিকারের দিকটিতেই বেশি মনোনিবেশ করছেন। মেডৌস সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে বলেন, আমরা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যাব না। বরং আমরা টিকা, থেরাপি চিকিৎসা এবং রোগ প্রশমনের অন্যান্য ব্যবস্থা হাতের নাগালে রাখব।

যুক্তরাষ্ট্র কেন এ মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার পথে যাচ্ছে না এ প্রশ্নের জাবাবে মেডৌস বলেন, কারণ এ ভাইরাস ফ্লুর মতোই মারাত্মক সংক্রামক। যদিও আমরা এটা নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট চেষ্টা করছি। তবে ঠিক কী করলে এ রোগের প্রশমন হবে আমাদের এখন সেদিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এটা হতে পারে ওষুধ বা টিকা বা কোনো ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আর কোনো মানুষ মারা যাবে না, আমাদের এখন সেটিই নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে হু হু করে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে মেডৌস এ কথা বললেন। এ থেকে মহামারী নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতা এখন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার।

সিএনএনের আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচ্য বিষয়গুলো টেনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পরিণতি হতে পারে ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মতোই। ১৯৮০ সালে দ্বিতীয়বার লড়াইয়ে নেমে ভরাডুবি হয়েছিল ডেমোক্রেট দলের এই প্রেসিডেন্টের। সেবার কার্টারের মতো জনমত জরিপে গড়ে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। ওই নির্বাচনে রোনাল্ড রিগ্যান ৪৪ রাজ্যে বিপুল ব্যবধানে জয় পান কার্টারের বিরুদ্ধে। সিএনএন বলছে, দুই নির্বাচনের যে ধারাবাহিক চিত্র তাতে এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনও তেমন ভূমিধস জয় পেতে পারেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com