চীনকে ভয় দেখাতে বা চাপে রাখতে ভারত দ্বিমুখি নীতি নিয়ে চলতে চাইছে
জাপান ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াও থাকবে। দ্বিতীয় নীতি নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে। ভারত চাইছে, তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে। চীন এই দুটি বিষয়েরই ঘোর বিরোধী। কিন্তু লাদাখ-কাণ্ডের পর চীনের বিরোধিতাকে আমল না দিয়ে এ ভাবেই বেইজিংকে চাপে রাখতে চাইছে দিল্লি।
মহড়ার সরকারি নাম হলো মালাবার নৌ মহড়া। ১৯৯২ সাল থেকে এই মহড়া চলছে। প্রথমে ভারত ও আমেরিকা এই মহড়ায় অংশ নিত। ২০১৫ সালে জাপানও তাতে যুক্ত হয়। তাতেও চীনের যথেষ্ট আপত্তি ছিল। অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এই নৌ মহড়ায় অংশ নিতে চাইছে। ২০০৭ সালে তারা একবার অংশ নিয়েছিল। কিন্তু চীনের ঘোরতর আপত্তিতে ভারত আর তাদের নৌ মহড়ায় ডাকেনি।
কিন্তু ভারত ভাবছে- এখন সময় বদলেছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই তলানিতে যে ভারত আর বেইজিং-এর আপত্তির তোয়াক্কা করছে না। সম্প্রতি এই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টোকিওতে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এই চার দেশের জোটকে বলা হয় কোয়াড। করোনাকালে চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোকিওতে যে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন, সেটার বিষয়বস্তুও হচ্ছে- কী ভাবে চীনের মোকাবিলা করা হবে, কী করে বেইজিংকে চাপ দেয়া হবে, তা নিয়ে।
কোয়াডের বৈঠকের পরই অস্ট্রেলিয়াকে সাথে নিয়ে মালাবার নৌ মহড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। মোদি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে আরো দেশের সহযোগিতা চায়। সে কারণেই মালাবার নৌ মহড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কতটা চাপে থাকবে চীন
চীনকে চাপে রাখার জন্য প্রবলভাবে চেষ্টা করছে ভারতসহ চার দেশের জোট কোয়াড। প্রশ্ন হলো, অস্ট্রেলিয়াকে মালাবার নৌ মহড়ায় অন্তর্ভুক্ত করে চীনকে কতটা চাপে রাখা যাবে?
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন,‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আমাদের মাথায় বরাবরই অস্ট্রেলিয়া ছিল। কিছুদিনের মধ্যে সম্ভবত নিউজিল্যান্ডকেও মালাবার নৌ মহড়ায় ডাকা হবে। অস্ট্রেলিয়াকে মহড়ায় ডেকে চীনকে একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে দিল্লী। এটা নিঃসন্দেহে ‘সাহসিকতার’ পরিচয়।’
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খবর করা প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, চীনকে চাপ দেয়ার জন্যই কোয়াড চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন,‘সাউথ চায়না সি এবং ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে চীন আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলছে। সেটাকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করার জন্য আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া চেষ্টা করছে। এই চার দেশের একজোট হয়ে চাপ দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একা না চলে চারটি দেশ একজোট হয়ে চীনকে চাপ দিতে চাইছে। তার একটা প্রভাব তো আছেই।’
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন,‘চীনকে একঘরে করাটা মুশকিল কাজ তো বটেই। বিশেষ করে চীন বিভিন্ন দেশে বন্দর তৈরি করে ফেলেছে। একসময় দিয়াগো গার্সিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি নিয়ে কত বিক্ষোভ, কত প্রতিবাদ হয়েছে। চীন কিন্তু বিভিন্ন দেশে বন্দর বানিয়ে, অত্যন্ত শক্তিশালী নৌ বাহিনী গঠন করে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চার দেশ এক হয়ে চীনকে চাপ দিচ্ছে। একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে।’