কাদের স্বার্থে কাজ করছে আরব লীগ?

0

ইতিহাস আলোচনা করে দেখা যায়, আরবদের ইস্যুগুলো আরব লীগের হাতে সুরাহা হয়নি বরং জটিল আকার ধারণ করেছে এর জ্বলন্ত উদাহরণ ইয়েমেন ক্রাইসিস। তাই এখন মুসলমানদের শত্রু মুসলমান, বন্ধু হয়েছে ইহুদি, জিওনবাদী গোষ্ঠী ও পশ্চিমারা, আরবদের ঘরে ঘরে যেন কামাল আতাতুর্ক! আরব লীগ কখনো আরব জনগণের ছিল না এটি আরব শাসকদের উদ্দেশ্য পূরণের কাজই করেছে।

বালফোর ঘোষণা ইসরাইলি রাষ্ট্র কায়েমে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে আর ইডেন আরবদের মুসলিম পরিচয় থেকে দূরে নিতে সহায়তা করেছে যাতে মুসলিম উম্মাহ সৃষ্টি হতে না পারে। শুধু আরবরা নয়, মুসলিম বিশ্বের সবাই জানে ইসরাইল সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী। পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যে কী চায় এবং কী করণীয়। জেরুসালেমকে ঘিরে আরেকটি ক্রুসেডের কাজ চলছে। কারা কোন শিবিরে যাবে তার কাজও অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। আরব বিশ্ব এখন দর্শকের ভূমিকায়, তারা শান্তি চায়। ক্রুসেডের নায়করা শান্তির জন্য যুদ্ধ চায়। দিনে দিনে ব্রিটেন বিভেদ ও ধ্বংসের যে বীজ বুনেছে তার ফসল আরবদের ঘরে তুলতে হবে। এমন একটি সময়ে কতিপয় দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করল যখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। যাতে ইভানজালিকেল ইহুদিদের ভোট ফস্কে না যায়। ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে কাজ করে, সেসব উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলে বাসী খাবারের মতো এরা পরিত্যক্ত হবে।

কোনো শর্ত বা পূর্ব চুক্তিতে না গিয়েই, ফিলিস্তিনিদের কোনো স্বার্থ রক্ষার ঘোষণা না দিয়েই ইসরাইল আরব দেশগুলোর সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল। ২০১৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে রেকর্ড সংখ্যক ইহুদি বসত নির্মাণ করা হয়। পশ্চিম তীরে বসত পাঁচ লাখে পৌঁছে। ১৯৬৭ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। তখনই সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়া দ্রুতগতি পেতে থাকে। ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল জিবরিল আল-রাজুব, আল খালিজ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আরব আমিরাত ২০১০ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের এড়িয়ে চলছে। কোনো সরকারি সভায়ও কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয় না। আরব লীগ ফিলিস্তিনিদের অর্থ প্রদান থেকেও দীর্ঘদিন বিরত। তিনি অভিযোগ করেন যে, কুশনার আরব দেশগুলো সফর করে এই বার্তাই দিয়েছে।

আরব লীগ আঞ্চলিক দুটি বড় সংগঠনের মুখোমুখি। জিসিসি বা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল এবং মাগরেব ইউনিয়ন। অনেকে মনে করেন, এই দুটির কারণেও লীগের কার্যকারিতা শূন্যের দিকে ধাবিত হতে থাকে। সদস্য দেশের মতানৈক্যের কারণে মাগরিব ইউনিয়ন কোনো কাজ করতে পারেনি তবে ভিন্ন মতামত স্বত্ত্বেও জিসিসি এখনো কাজ করছে। যদিও জিসিসিতেও প্রচ- মতবিরোধ রয়েছে। এখন দেশগুলো দুটি শিবিরে বিভক্ত। একটি দলে রয়েছে, সৌদি আরব, আমিরাত ও বাহরাইন। অপর দলে কাতার, ওমান ও কুয়েত।

জিসিসির স্বাস্থ্যও যেকোনো সময় আরব লীগের মতো ভেঙে পড়তে পারে। এসব প্রমাণ করে যে, আরবরা মিলে মিশে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নুতন বিশ্ব ব্যবস্থায় আরব বিশ্বের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বলা হচ্ছে, ধর্মীয় বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ এই পরিণতি। সাইক পিকট মিথ, বাথ পার্টি, লরেন্স অব আরাবিয়া, বালফোর ঘোষণা, ইহুদিদের আরব বিরোধী জিওনবাদী চক্রান্ত, সুন্নী খেলাফত বনাম শিয়া খেলাফত, অতি সম্প্রতি আরব মহিলাদের স্বাধীন করে দেয়া এবং হালাল নাইট ক্লাব চালু এসব এক দিনে হয়নি। শত বছরের সাধনা। ঘুরে দাঁড়াতে হলে আরো একশত বছর দরকার। অত সময় আরব বিশ্ব বা প্রকারান্তে মুসলিম বিশ্ব পাবে না।

ওসমানিয়া খেলাফত ধ্বংস হওয়ার পর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যোগসাজশে প্রচুর সম্পদের অধিকারী আরব রাষ্ট্রগুলোতে বিভেদের বীজ পুঁতে দেয়া হয়। অঙ্কুরিত চারাগাছ আস্তে আস্তে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। অথচ আরব বিশ্ব ব্যস্ত অপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে। তারা ভুলে যাচ্ছ তাদের চ্যালেঞ্জ কী, করণীয়ই বা কী।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com