নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি, হতে পারে মামলা
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) হুমকি ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করার ঘটনায় ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্বাচনকালীন ঘটনা হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপষিদ বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) শেখ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনি (ফরিদপুরের ডিসি) আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছি। কারণ এটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়। এখানে যদি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকে, কোনো সমস্যা থাকে- সেটা নির্বাচন কমিশন অ্যাড্রেস করবে।’
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচন চলার সময় কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তিনি সেটা করেছেন। এজন্য আমরা অনুরোধ করেছি তারা যাতে ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া উনি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সভা-সমাবেশ করেছেন, ডিসির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সে বিষয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তিনি (নিক্সন চৌধুরী) একজন নারী ইউএনও’র সঙ্গে এসিল্যান্ডকে নিয়ে যে অশোভন উক্তি করেছেন, বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করেছেন, সেটারও আইনগত দিক আমরা দেখছি। আইসিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী এটা তো অপরাধ। সেই অনুযায়ী মামলা করা যায় কিনা সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোর দেখভাল করছি।’
‘নির্বাচনের সময় সকল ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। ১৫ দিন পর্যন্ত তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। যারা এভাবে মাস্তানি গুন্ডামি যারা করে তাদের বিরুদ্ধে যদি নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নেয় তবে ভবিষ্যতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবে না। তাদের যদি নিরাপত্তা না থাকে, নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়, এটার যদি কোনো প্রতিকার না হয় স্বাভাবিকভাবেই কেউ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে না।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সবকিছু বর্ণনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান হেলালুদ্দীন আহমেদ।
বিষয়টিকে নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ অফিসপাড়ায়।
নির্বাচন কমিশনে ডিসির পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়। এ বিষয় নিয়ে হুমকি, মিথ্যা, মানহানিকর ও অশালীন বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন), চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের বিজয়ী চেয়ারম্যান মো. কাউছার এবং তার অনুসারীরা। তাদের এহেন আচরণ উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয় ডিসির চিঠিতে।
নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ায় ডিসি অতুল সরকারের কাছে টেলিফোনে কৈফিয়ত তলব করেন মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ার কারণে তার সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় হলে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে জানান ফরিদপুরের ডিসি।
তিনি আরও লিখেছেন, শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ১১ হাজারের বেশি ভোটে বিজয় লাভ করে। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচন-পরবর্তী জনসভায় নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিজয়ী প্রার্থী মো. কাওছার ও সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরা ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেন।
‘দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অত্যন্ত মানহানিকর এবং অশ্রাব্য ভাষায় হুমকি ও গালিগালাজ করেন। তার অনুসারীরা বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেন যা একজন সংসদ সদস্য বা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়।’
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করায় ভাঙ্গা উপজেলার এসি ল্যান্ড কর্তৃক একজনকে স্বল্পকালীন সময়ে আটকে রাখলে চরভদ্রাসনের ইউএনওকে উচ্চারণ অনুপযোগী অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি (নিক্সন চৌধুরী)। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অত্যন্ত মানহানিকর ও অশোভন উক্তি জেলা পর্যায়ের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়কারী জেলা প্রশাসনের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের জন্য অবমাননাকর।
এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডিসি লিখেছেন, এ ধরনের হীন বক্তব্য স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সরকারের সাফল্য সম্পর্কে ভুল বার্তা দেবে। তেমনি মাঠ প্রশাসনের সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পথেও চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।